Software- Antivirus and Anti-Malware

Antivirus and Anti-Malware -

There are antivirus and anti-malware and it's free downloadable. So get you Antivirus and Anti-Malware now and protect your computer.........































































0 comments:

Story- আমার অনন্ত নিঝুমতা – ২


আমার অনন্ত নিঝুমতা – 


কাল বাসায় চলে যাওয়ার পর সোজা নিজের রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে নিঝুমকেঁদেছে অনেকক্ষণএটা সে কী করল? নিজের এতদিনের বন্ধুর বন্ধুত্বকে রাখতে দিল না? রূপা ওকে ভালো বাসুক না বাসুক,এতদিন তো কথাটা দুজনের কাছেই না- বলা ছিলনিঝুম বলে দেওয়ার পর আর কি তারা সারাজীবনেও স্বাভাবিকভাবে বন্ধুর মতো পথ চলতে পারবে সত্যিটাকে উপেক্ষা করে? কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানে নারাতে মার ডাকাডাকিতে ঘুম ভাংলে উঠে কোনমতে নাকেমুখে কিছু গুঁজেছেমার কাছে শুনেছে প্রজ্ঞা আর নিলীমা ফোন করেছিলবলে দিয়েছে তার শরীরটা খারাপ, এখন কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগছেনা, তাই আবার ফোন করলে মা যাতে বলে যে সে ব্যস্ত আছেবলে আবার উঠে নিজের রুমে চলে গেছে
নিঝুমের মা মেয়ের চোখমুখ ফোলা কেন, জ্বর এসেছে নাকি জিগ্যেস করতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু নিঝুম কোন সুযোগ দেয়নি, যেয়ে শুয়ে পরেছেআজ যখন রাতের অন্ধকারে পুকুরপাড়ে একলা দাঁড়িয়ে নিবিড় তার কথা ভাবছে, ঠিক একই সময়ে নিঝুমও ভাবছে নিবিড়ের কথাচুপচাপ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে নিঝুমভাবছে বন্ধুর সামনে এরপর কোন মুখে দাঁড়াবে সে কালকের পরভেবে চিন্তে ঠিক করে যে না, তার কোন অধিকার নেই নিবিড়ের জীবন নষ্ট করারএকবারই যথেষ্ট হয়েছে, আর নাআর নিবিড়ের সাথে সে যোগাযোগ করবেনাসারাদিন এভাবেই অন্যমনস্ক হয়ে থেকেছে আজ নিঝুমক্লাস ছিলনা কোন, তাই বাইরেও যায়নিপুরোটা দিন আকাশে মেঘ আর সূর্যের লুকোচুরি খেলা দেখেছেএখন দেখছে ভরপুর জ্যোৎস্নায় আলোকিত হয়ে ওঠা প্রকৃতিচাঁদ আর মেঘ, বড় পছন্দ নিঝুমেরশীতের কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতিতে আজ দুটোই বিদ্যমানতন্ময় হয়ে দেখতে থাকে নিঝুমআর মন ভেসে যেতে থাকে বহুদূরের কোন নিবিড় আর রূপার কাছেআপনা থেকেই বারবার বৃষ্টি নামে চোখের কোল বেয়ে
নিঝুমের মা কোনমতেই মেয়ের এরকম চুপ হয়ে থাকা আচরণ মেলাতে পারছেন না তার রোজকার আচরণের সাথেনাম নিঝুম হলে কী হবে, মেয়ে তাঁর মোটেই নিঝুম নয়সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে সবসময় মেয়েটাযেখানে হাসির কিছুই নেই, সেখান থেকেও কী করে যেন হাসির খোরাক বের করে ফেলেসবকিছু নিয়ে ফাজলামির জন্য মায়ের কাছে বকুনিও কম খায় না, তবুও থামেনা তার দুষ্টুমি, ফাজলামিসেই মেয়ে দুদিন ধরে একদম নিশ্চুপকিছু জিগ্যেস করলে দায়সারা জবাব দিচ্ছে, বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়ে দিচ্ছে ঘুমিয়েআজও প্রজ্ঞা আর নিলীমা কয়েকবার করে ফোন করেছে, ধরেনি নিঝুমওদের জিগ্যেস করেছেন যে কিছু হয়েছে নাকি, নিঝুম ওদের সাথে কথা বলছেনা কেনওরা কোন সন্তোষজনক উত্তর না দিয়েই ফোন রেখে দিয়েছেশেষে ভেবেছেন কোন মান অভিমান হয়েছে হয়তো ওদের সাথে, অভিমান তো খুব বেশি নিঝুমের কিন্তু তাই বলে নিজে এমন চুপ হয়ে যাবে, এমন মেয়ে তো সে নয়নিঝুমকে কী হয়েছে যে জিগ্যেস করবেন, সে সাহসটাও পাচ্ছেন না নিঝুমের মা, জানেন মেয়ের চাপা স্বভাব, হাজার সমস্যায় পড়লেও কোনদিন কাউকে কিচ্ছু বলবে নাকী আর করা, একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিবিড়ের মা কে ফোন করেন তিনি, মেয়ের ব্যাপারে যে কোন কথায় বান্ধবীর মতামতকে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেনমেয়ে তাঁর পেটের হলেও নিঝুমের মতো তিনিও নিবিড়ের মাকে নিঝুমের মার সম্মানই দিয়ে এসেছেনতাই ওকে নিয়ে যে কোন ব্যাপারে নিবিড়ের মার মতামত নেওয়া জরুরিরিং বেজেই চলে ল্যান্ডলাইনে,কেউ ধরেনাবেশ কয়েকবার করার পর মনে পরে নিবিড়দের তো রাজশাহী যাওয়ার কথা, সুতরাং এখন না পাওয়ারই কথানিবিড়ের মোবাইলে করবেন নাকি ভাবেন, তারপর সময়ের দিকে তাকিয়ে বোঝেন যে এতরাতে মেয়ে কেন চুপএই ইস্যু নিয়ে বান্ধবীকে বিরক্ত করা ঠিক হবেনাখানিকটা হতাশ হয়েই ফোনটা নামিয়ে রাখেন তিনিনিঝুমের রুমে যেয়ে দেখেন মেয়েটা আবার ঘুমিয়ে পড়েছে, রাতে খেলোও না আজঅস্থিরচিত্তে নিজের রুমে ফিরে আসেন তিনিনিঝুমের বাবাকে যে বলবেন, তাও পারছেন না, মহা হৈচৈ লাগিয়ে দেবেন তাহলে কন্যাপাগল বাবা, অথচ শেষে দেখা যাবে কিছুই নানিজের মনের অশান্তি মনেই রেখে দেন নিঝুমের মা
মার উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললেও আসলে নিঝুম ঘুমায়নিমা চলে যাওয়ার পর আবার তাকায়, একদৃষ্টিতে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে, মন জুড়ে কেমন একটা অবসাদবারবার নিবিড়ের নামটা ঘুরেফিরে বাজতে থাকে কানের কাছেআর সেই সাথে বন্ধুকে কষ্ট দেওয়ার বেদনায় বারবার হৃদয় মোচড় দিয়ে ওঠে
চোখে ভোরের আলো এসে পড়ায় ঘুম ভেঙ্গে যায় নিঝুমেরতবে চোখ খোলে নাপাশ ফিরে শোয়চোখের পাতাগুলো অসম্ভব ভারি হয়ে আছে,চোখ না খুলেই বুঝতে পারে ঘুমের মধ্যেও কেঁদেছে সম্ভবতঅবসাদটা ফিরে আসে আবার মনেতবে আজ কিছুটা প্রকৃতস্থ সেমা তাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন, কাল বুঝেছেতাই অন্তত বাবা মার সামনে নিজের বিষণ্ণতাটা প্রকাশ করা চলবেনা কোনমতেই, ভাবে সেওহ আজ তো আবার নিলীমার সাথে ক্লাস আছেদুদিন ফোন করে পায়নি, আজ নিশ্চয়ই আমাকে চেপে ধরবেআর তারমানে নিবিড়ের বিষয়টা নিয়ে কথা বলবেই…”, নিজের অজান্তেই একটা গোঙানি বের হয়ে আসে মুখ থেকেচোখ বন্ধ অবস্থাতেই বিছানার এপাশ থেকে ওপাশে শরীরটাকে নিয়ে যায়গুটিসুটি মেরে লেপের নিচে ঢুকে যায় আরও ভালোমতো ঘুমিয়ে পড়ে আবার কখন যেনঅদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখেঅনেকগুলো নিবিড় তার চারপাশেযেদিকেই যাচ্ছে শুধু নিবিড় আর নিবিড়পালাতে চায় সে অনেক দূরে পারেনাহাত টেনে ধরে রেখেছে নিবিড়ছাড়ানোর চেষ্টা করে, পারেনাধীরে ধীরে অনেক নিবিড়ের মুখ মিলে যায় একটা নিবিড়েকী যেন বলতে চাইছে নিবিড়কিন্তু নিঝুম কিছুতেই শুনতে চাইছেনাশেষ পর্যন্ত জোরে টান দিয়ে নিজের খুব কাছে নিয়ে আসতে থাকে নিবিড় নিঝুমকে আরও কাছে আরও ……ধড়মড় করে উঠে বসে নিঝুম এই শীতেও ঘামে ভিজে গেছে শরীরঘড়ির দিকে তাকায়, আটটা বেজে পাঁচতাড়াহুড়ো করে উঠে পড়ে ফ্রেশ হতে দৌড় লাগায় বাথরুমের দিকে, ক্লাস আছে সাড়ে আটটায় স্বপ্নটা থেকে যেন জোর করে বের হয়ে আসতে চায় সে, একবার ভাবেওনা যে কী দেখল, কেন দেখল, জোর করে দূরে সরিয়ে রাখে স্বপ্নটাকে
নাস্তার টেবিলে নিঝুমকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন মাআবার আগের মত উৎফুল্ল নিঝুমএই প্রথমবার মেয়ের দুষ্টুমিতে বাধা দেন না তিনিবরং খুশি হনভাবেন যে মেয়ের শরীর খারাপ ছিল হয়ত এই দুদিনমায়ের স্বস্তি নজর এড়ায় না নিঝুমেরতবে কিছু বলেনামাকে খুশি দেখার জন্যই তো তার খুশি থাকার এই অভিনয়
ক্লাসে যেয়ে দেখে প্রচুর ছাত্রছাত্রী হাজিরতবে নিলীমা তখনও আসেনি বেছে বেছে একদম পিছনের সীটে যেয়ে বসে নিঝুম যাতে নিলীমা আসলেও তাকে দেখতে না পায়কিন্তু বিধি বামনিলীমা ঠিকই খুঁজে বের করে ফেলে তার অবস্থান নিঝুমের পাশের সীটে বসে থাকা মেয়েটিকে একরকম জোর করেই উঠিয়ে দিয়ে সীটটা দখল করেনিঝুম দেখেও দেখেনা এসবচুপচাপ ক্লাস লেকচার তুলতে থাকে খাতায় নিলীমা কোন ভুমিকায় যায়নাসোজা নিঝুমের কানে মোবাইল ঠেকিয়ে দেয়, “কথা বলসে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে নিবিড়ের অস্থির, উদ্বিগ্ন কণ্ঠ ভেসে আসে, “হ্যালো!উত্তর দেয়না নিঝুমনিলীমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে ফোনটা তার হাতে ছেড়ে দিতেনিলীমা দিয়ে দেয়ফোন হাতে পেয়েই নিঝুম কান থেকে নামিয়ে নিয়ে কেটে দেয়একটা কথাও বলেনা নিবিড়ের সাথেনিলীমা রেগে যেয়ে বলে, “তুই এটা কী করলি? তুই জানিস এই দুদিন ছেলেটা কী পরিমাণ টেনশন করেছে তোর জন্য?” নিঝুম উত্তর দেওয়ার আগেই আবার ফোনের স্ক্রিনে নিবিড়ের নামটা জ্বলতে নিভতে শুরু করেনিঝুম কেটে দেয়নিলীমা এবার ভীষণ রেগে যায় নিঝুমের ওপরবলে, “শোন নিঝুম, তুই বাড়াবাড়ি করছিস খুব বেশিযা হয়েছে তাতে তোর তো কোন দোষ নেইএভাবে নিজেকে আর আরেকটা মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মানে কী? তুই যদি এবার কথা না বলিস, আমি আর কক্ষনও তোর সাথে কথা বলবনাএটা আমার শেষ কথাএতক্ষণে মুখ খোলে নিঝুম, “এভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছিস কেন?” নিলীমা উত্তর দেয়, “ব্ল্যাকমেইল হলে তাইইকিন্তু কথা তোকে বলতেই হবে নিবিড়ের সাথেহাল ছেড়ে দেয় নিঝুমতবুও শেষ চেষ্টা করে, “কিন্তু এখন তো ক্লাসে আছিস্যারও আছেন ক্লাসেএখন কথা বলা সম্ভব নানিলীমা এবার তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে, “কেন লিখতে জানিস না নাকি তুই?? নিবিড়কে না এত এত মেসেজ দিয়েছিস? ভাবটা এমন দেখাচ্ছিস যেন শুধু ফোনেই কথা হয়েছেকথা ক্লাস শেষ হলে বলবি দরকার হলেএখন এস এম এস দেযা বলছি করবান্ধবীর রাগ দেখে এত অসহায় অবস্থায়ও হেসে দেয় নিঝুমফোনের দিকে তাকায়দেখে ইতিমধ্যে সাতটা মিসডকল এসে গেছে নিবিড়ের নাম্বার থেকেফোন সাইলেন্ট থাকায় রিং শোনা যায়নি আবার বাজতে শুরু করেনিঝুম কেটে দিয়ে মেসেজ লেখে, “আমি ক্লাসেএক মিনিটও পার হয়না, উত্তর আসে, “আমি কিচ্ছু কেয়ার করিনাআই জাস্ট ওয়ানট টু টক টু ইউ রাইট নাওনিঝুম লেখে, “নিবিড় একটু বোঝার চেষ্টা কর প্লিসআমি ক্লাসে আছিনিবিড় উত্তর দেয়, “ফোন ধরে একটাবার শুধু হ্যালো বল, তারপর কেটে দিয়ে মেসেজ দেবঅগত্যা তাই করে নিঝুমফোন আসলে ধরে হ্যালোবলে অপর প্রান্ত থেকে কিছু বলা হয়নাফোন কেটে যায়এরপর অনেক তর্কবিতর্ক হয় দুজনের মধ্যে মেসেজেনিবিড়ের অস্থিরতা, নিঝুমের দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা, আর নিবিড়ের বারবার তাকে ধরে রাখার ব্যাকুলতা, কাকুতিমিনতিভরা অসংখ্য মেসেজ আদানপ্রদানের পরও নিঝুমের সিদ্ধান্তের কোন পরিবর্তন না হওয়াশেষপর্যন্ত নিঝুম লিখে দেয়, “দ্যাখ নিবিড়, আমার জন্য তোর আর রূপার মধ্যে নরমাল ফ্রেন্ডশিপটাও নষ্ট হয়ে গেছেআমি চাইনা আর তোর জীবনে থেকে তোর আরও বড় কোন ক্ষতি করে ফেলতেতুই প্লিস আর আমার সাথে যোগাযোগ করিস নানতুন একটা জীবন শুরু কর যেখানে কোন নিঝুম নেইভাল থাকিসবাইতারপর নিলীমার হাতে ফোন দিয়ে দেয়রিপ্লাইটা নিলীমার কাছে পরেসে মেসেজটা পড়ে একটা কথাও না বলে নিঝুমের চোখের সামনে তুলে ধরে ফোনটাতাতে লেখা, “আমি পারবনাআমার জীবনে আমি তোমাকে চাই, ব্যস চাইএরপর আর একটা কথাও আমি শুনতে চাইনারূপার সাথে বন্ধুত্বের দাম তোমার সাথে এত বছরের বন্ধুত্বের থেকে বেশি নাআর সত্যি কথা বলতে গেলে এমন কোন গভীর বন্ধুত্ব নেইও ওর সাথে আমার যে তা নষ্ট হলে আমার জীবন চলে যাবেআমি আজ মামাবাড়ি থেকে ফিরবআজ রাতের মধ্যে যদি কোন খোঁজ না পাই তোমার তাহলে সোজা তোমার বাসায় যেয়ে উপস্থিত হবএখন তুমি ভেবে দেখ কী করবেনিবিড়ের এমন অবুঝ কথায় নিঝুম নির্বাক হয়ে যায়নিলীমা আস্তে আস্তে বলে, “এই মানুষটাকে হারাসনা রে নিঝুআর কোন কথা হয়না দুজনের মাঝে এরপর ক্লাস শেষ হয়ে যায় একটু পরনিঝুম বের হয়ে দেখে তার গাড়ি এসেছেড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে কেউ আসেনি কেন বাসা থেকেড্রাইভার বলে যে হঠাৎ জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় কেউ আসতে পারেনিবাসায় ফিরে ভীষণ একটা দুঃসংবাদের সম্মুখীন হয় নিঝুম
ফেরার সময় নিঝুম কল্পনাও করতে পারেনি তার জন্য এরকম একটি খবর অপেক্ষা করে থাকবেবাড়ি ফিরে দেখে কেউ নেইকোথায় গেল সবাই ভাবতে ভাবতেই ল্যান্ডলাইনটা বেজে ওঠেফোন ধরে নিঝুমমাকোথায় গেছ মা??”, মার গলা শোনার সাথে সাথে ভয় আর উদ্বেগমিশ্রিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে নিঝুমকিন্তু তার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে মা তাকেই প্রশ্ন করেন, “কখন ফিরেছ?” নিঝুম জানায় যে মাত্রই বাসায় ঢুকেছে সেএরপর মা বলেন, “শোন, বাসার দরজা ভাল করে লাগিয়ে সাবধানে থাকআর ফ্রিজে খাবার আছে, গরম করে খেয়ে নিওআমি তোমার বাবার সাথে হসপিটালেওঁর হঠাৎ হার্টঅ্যাটাক করেছেঅপারেশন লাগবে সম্ভবত সাবধানে থাক মাআমি পরিস্থিতি বুঝে আসছিতাড়াতাড়িই ফেরার চেষ্টা করবতখন তোমাকেও নিয়ে আসব সম্ভব হলেবলে নিঝুমকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দেন তিনিনিঝুম তখনও ফোন ধরেই রেখেছেনিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সেবাবা হার্টঅ্যাটাক করেছেন! নিজের অজান্তেই হাঁটু ভাঁজ হয়ে আসে তারকোনমতে ফোনটা ক্রেডলে রেখে মেঝেতেই বসে পড়ে সেসমস্ত বোধবুদ্ধি, আবেগ কোথায় হারিয়ে গেছে যেনকাঁদতেও পারছেনাবাবা কোন হসপিটালে আছে নামটাও তো জানা হয়নি তারহঠাৎ করেই নিজেকে বড় অসহায় লাগতে থাকে নিঝুমের বাবা
ক্রিং ক্রিং! ক্রিং ক্রিং! ফোনের শব্দে বাস্তবে ফিরে আসে নিঝুমকতক্ষণ একভাবে বসে আছে সে নিজেই জানেনাকেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে অপলকেবাজছে, ধরতে হবে, কোন খেয়ালই নেই যেন তারক্রিং ক্রিং! এবার যেন কারেন্টের শক খেয়ে হুঁশ ফেরে, তাড়াহুড়ো করে ফোন কানে ঠেকায়হ্যালো!!মা করেছেন আবারজানান যে ডাক্তাররা বলছেন এখন বাবা বিপদমুক্ত কয়েকদিন ভর্তি থাকতে হবে, তারপর অপারেশন করা হবেতবে আপাতত আর কোন ভয় নেই অনেকটা আশ্বস্ত হয়ে ফোন রাখে নিঝুমএবার হসপিটালের নামও জেনে নিয়েছেমা চলে আসবেন একটু পরেইইতিমধ্যে আত্মীয় স্বজনদের ফোন আসা শুরু হয়ে গেছে সবার একই প্রশ্ন, কী হয়েছে বাবার আর অভয় প্রদানএকনাগাড়ে অনেকগুলো কল অ্যাটেনড করে একটু হাঁপিয়ে ওঠে নিঝুমবসে না থেকে একটু হাঁটাচলা করে অসম্ভব শূন্যতা অনুভব করে এইসময়ফাঁকা বাড়িটা যেন তাকে গিলে নিতে চাইছে হঠাৎ স্পষ্ট শুনতে পায় মা তাকে ডাকছে ড্রয়িং রুম থেকে, “নিঝুম! নিঝুম!অথচ মা তো বাসায় নেইতাহলে? তাহলে কে ডাকছে? তবে কি মনের ভুল? কেমন একটা ভয় ধরে যায় নিঝুমের মনেএকছুটে মার ঘরে এসে বসে পড়ে বিছানায়বিকেলে মা আসা পর্যন্ত আর একটাবারের জন্যও বের হয়না ওই ঘর থেকে, দুপুরে খায় পর্যন্ত না
মা আসেন বিকেলেতাঁর কাছ থেকে জানতে পারে নিঝুম যে সে চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরই হঠাৎ ভীষণ ব্যথা হতে থাকে বাবার বুকেপারিবারিক ডাক্তারের কাছে ফোন করলে তিনি বলেন যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে মুভ করাতেহাসপাতালে নেওয়ার পর আই সি ইউ তে নিয়ে যাওয়া হয় বাবাকেকিছুক্ষণ পর ডাক্তাররা জানান মাইল্ড একটা অ্যাটাক হয়েছে তাঁর, অপারেশন করতে হতে পারেআরও দু-তিন ঘণ্টা পর জানা যায় হার্টে কিছু ব্লক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, অপারেশন লাগবেতবে আপাতত ভয়ের কোন কারণ নেই বলেও জানিয়েছেন ডাক্তাররাকিছু টেস্ট দিয়েছেন, সেগুলো করার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে এখন ঠিক কী অবস্থা তাঁর হৃদযন্ত্রেরএখন ঘুমের ওষুধ দিয়ে রাখা হয়েছে, ঘুমুচ্ছেনসেই ফাঁকে মা বাসায় এসেছেন সারাদিন অভুক্ত আর অসম্ভব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মাকে জোর করে খাওয়ায় নিঝুম, নিজেও কিছু খায় কোনমতেমা আবার হসপিটালে যাওয়ার জন্য বের হবেন একটু পরেই এবার নিঝুমকেও নিয়ে যাবেন বলেন
হসপিটালে গেলেও বাবার সাথে দেখা হয়নাএখনও অবজারভেশনে রাখা হয়েছে তাঁকেরাতে থাকারও কোন ব্যবস্থা নেই তাইকিছুটা হতাশ মন নিয়েই বাড়ি ফেরে মা-মেয়েতবে ডাক্তাররা আশ্বাস দিয়েছেন ভয়ের কিছু নেই বলে, এটুকুই সান্ত্বনা
বাড়ি ফিরে আর পড়তে মন চায় না নিঝুমেরমা রান্নাঘরে ব্যস্তফিরেই নিবিড়ের মাকে ফোন করেছিলেন বিপদের কথা জানিয়েতাদের কথোপকথনে থাকেনি নিঝুমনিজের রুমে চলে আসেচেঞ্জ করে বিছানায় গড়িয়ে পড়েজানালার ধারেই বিছানাউলটো হয়ে শুয়ে কত কী আকাশ-পাতাল ভাবতে থাকে সেএমন সময় মার ডাক শুনে উঠে আসেনিলীমা ফোন করেছেনিঝুমের বাবার খবর জানতে চায়নিঝুম জানতে চায় যে সে কীভাবে জানল তার বাবা অসুস্থ, সে তো কোন বন্ধুবান্ধবকে জানায়নি এখনওনিলীমা বলে নিবিড় একটু আগে তাকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে, তা থেকে জেনেছে আঙ্কেল হসপিটালেমেসেজটা পড়ে শোনায় নিঝুমকেমুলত তাকেই উদ্দেশ্য করে লেখা মেসেজের কথাগুলোলিখেছে, “নিঝুমকে বলিস ও যদি আমাকে বন্ধু বা আর কিছুও মনে করে তাহলে যাতে জেনে রাখে যে ওর এই বিপদে আমি ওর পাশেই আছি, একা নাও যাতে ভয় না পায়, আঙ্কেল ভাল হয়ে যাবেন নিশ্চয়ইকথাগুলো শুনতে শুনতে কেমন অদ্ভুত একটা শিহরণ খেলে যায় নিঝুমের শরীরেতবে নিলীমাকে কিছু টের পেতে দেয়নাবলে, “হুমনিলীমা বলে, “প্লিস এবার একটা মেসেজ দিস নিবিড়কেনিজের জন্য না হোক, আমার জন্যএবার আর নিলীমার কথা ফেলে না সে বলে, “আচ্ছা দেব বাবাএখন রাখ, কাল দেখা হবেতুই চিন্তা করিস না, আমি ভাল আছিফোন রেখে আবার ফিরে আসে নিজের ঘরেঅকারণেই মনটা ভাল হয়ে আছেকী মনে করে ডেস্কটপটার দিকে এগিয়ে যায়অন করে গানের ফোল্ডারটা বের করে খুঁজে খুঁজে বের করে নিঝুমলেখা ফোল্ডারটাএতে তার প্রিয় শিল্পীর প্রিয় গানগুলো রয়েছেতাই আলাদা করে নিজের নামে ফোল্ডার বানিয়েছে এই গানগুলো দিয়েসবচেয়ে প্রিয় গানটা ছেড়ে দিয়ে আবার বিছানায় চলে আসেস্পিকারে বাজতে থাকে,
নীরবে হায় এ মন যে ভেসে যায়
জানিনা যে কোন স্বপনের সীমায়
এলোমেলো মন, ভাবে শুধু তোমারে আজ
শেষ হবে রাত শুধু তুমি-আমি আজ
………………………………………………
… … … … … … … … … … … … … …
তুমি যদি চাও বৃষ্টি হবে আজ,
এই রাতে আকাশের বুকে
তুমি যদি চাও তবে জোছনা রবে,
চাঁদ জেগে রয় মেঘের ফাঁকে
এলোমেলো মন……”
শেষ লাইনগুলো নিঝুমের সবচেয়ে প্রিয়আর গায়কের তো কথাই নেই! পৃথিবীতে এই একটা মানুষের উপরই নিঝুম বাস্তবিক অর্থে একেবারে, ফিদা যাকে বলেকিন্তু নিবিড়ের একে মোটেই পছন্দ নয়সেদিন এসে এই গায়কের একটা সিডি ইচ্ছে করে নিঝুমের সামনে নষ্ট করেছেখুব রাগ উঠেছিল সেদিন নিঝুমেরচাঁদের দিকে তাকিয়ে গান শুনতে শুনতে এসব টুকরো টুকরো কথা ভেসে আসতে থাকে মনেরাতে খাবারের সময় নিবিড়কে একটা মেসেজ দেয় নিঝুম থ্যাঙ্কস জানিয়েএরপর আরও কিছু ছোটখাটো কথার পর বাই দিয়ে দেয়বোঝাই যায় যে সে মেসেজ দেওয়ায় নিবিড় খুব খুশি হয়েছেকিন্তু মন থেকে নিজেকে মাফ করতে পারেনা সে, তাই ইচ্ছে করেই বেশি কথা বাড়ায়নি
দু-তিন দিনের মধ্যেই বাবাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়ব্লক ধরা পড়েছে হার্টে অপারেশন করতে হবেতবে তার আগে কিছুদিন বিশ্রাম করতে বলেছেন ডাক্তার, টেস্টগুলোও করাতে হবে এই সময়ের মধ্যেএই কয়দিন মা বাসায় না থাকলে নিবিড়কে কল করে কথা বলেছে নিঝুমছেলেটা জাদু জানে মনে হয়কী জানি কেন, ওর সাথে কথা বললেই মনটা আপনা থেকেই ভাল হয়ে যায়নিবিড় হয়ত রাস্তায় আছে, কোন মেয়ে লাইন মারছে ওর সাথেনিঝুমকে সেই কথা বলতেই আবার আগের মত পিছে লাগে, খুনসুটি করেমাঝে রূপাকে নিয়েও খুনসুটি করেছে ওরানিবিড়ের নাম দিয়েছে নিঝুম কার্টুননিবিড়ের সেই নামে প্রবল আপত্তি থাক্লেও নিঝুম ডাকলে সাড়া দেয়তেমনি একদিন কার্টুন দেকে মেসেজ পাঠায় নিঝুমসাথে সাথে প্রবল আপত্তি আসে নিবিড়ের দিক থেকেতখন নিঝুম বলে, “আচ্ছা কার্টুন হতে নাহয় আপত্তি বুঝলাম, কিন্তু রূপার বর ডাকলে তো আর আপত্তি হবেনা তোর তাই না?” লিখে শেষে একটা ভেংচি কাটার ইমো জুরে দেয়নিবিড়ও বিশাল একটা হাসি দিয়ে বলে, “না না ওটা হতে আপত্তি নেই!মেসেজটা দেখে আবারো একটা ক্ষীণ আশা জাগে নিঝুমের মনে তবে গতবারের মত বোকামি করতে যায় না আরআরও শিওর হতে হবে, তারপর কিছু করা যাবে, ভাবে সেআস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসে আবার তাদের বন্ধুত্ব ইতিমধ্যে আকাশের সাথেও একটু মেসেজ বিনিময় হয়েছে নিঝুমেরআকাশ জানিয়েছে সে নিঝুমকে খুবই মিস করছেনিঝুম বলেছে মিস করার কিছু নেইকিন্তু আকাশকে মেসেজ দেওয়ার কথা শুনে খেপে যায় নিবিড় একদিন, সেদিন নিঝুম তাকে মিসডকল, মেসেজ কিছুই দেয়নিঅথচ আকাশকে মেসেজ দিয়েছেভীষণ বকাবকি করে নিঝুমকে নিঝুম আবার একই প্রশ্ন করে ওকে যে রোজ কেন ওর নিবিড়কে খোঁজ দিতে হবে, কিন্তু উত্তরে আবার বকা পায়মন খারাপ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর বলে যে সে নিবিড়কে আর মেসেজ দেবেনা, কথাই বলবেনা আর তার সাথেএরপর নিবিড় আর কী রাগ করবে, আবার নিঝুমের মান ভাঙ্গায় আর বোঝায় যে ওর টেনশন লাগে নিঝুমের খোঁজ না পেলে
দেখতে দেখতে নতুন বছর শুরু হয়ে যায়বছরের প্রথম দিনে নতুন এক বান্ধবী, অনন্যার সাথে নিবিড়ের পরিচয় করিয়ে দেয় নিঝুম; অবশ্যই ফোনেঅনন্যা নিঝুমের মায়ের ছোটবেলার এক বান্ধবীর মেয়েনিঝুম আর অনন্যা একই স্কুলের একই ক্লাসে পড়লেও কখনও তাদের মধ্যে তেমন কথা হয়নিতারা জানতও না যে তাদের মারা পরিচিতহঠাৎ একদিন নিঝুমের মায়ের সাথে অনন্যার মার দেখা হতেই জানা যায় যে নিঝুম আর অনন্যা তাঁদেরই মেয়েসেই সুত্রেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে নিঝুম আর অনন্যার মাঝেঅনন্যা আজকালকার মেয়েশ্যামলা বর্ণ আর ছোটখাটো গরনের অনন্যা দেখতে খারাপ নয়, তবে অতটা আহামরিও নয়তবুও তার বয়ফ্রেন্ডের সংখ্যা ইতিমধ্যেই তিন ছাড়িয়েছেআগের দুজনের সাথে ব্রেক আপের পর নতুন একজন হয়েছে এর মাঝেইতবে ফোনে কথা বলার মত ছেলের অভাব নেই তার লিস্টেঅনন্যার একটাই অভিযোগ যে তাকে অনেক ছেলেই বোনডাকলেও নাকি পরে আর তার সাথে বোনের সম্পর্ক রাখতে চায় না, অন্য কিছু হিসেবে পেতে চায় তাকেসেজন্যই নিবিড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় তাকে নিঝুম, কারণ তার মতে নিবিড় কাউকে বোন ডাকলে তার কাছে সে বোনই থাকে সবসময়সে অন্য ছেলেদের মত নয়ভালভাবেই গ্রহণ করে অনন্যাকে নিবিড়তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নিঝুম টের পায় যে এদের মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক ভাইবোনের মত থাকছে নাঅন্তত অনন্যার দিক থেকেতবে নিবিড়ের ব্যাপারে কিছু সঠিক করে বুঝতে পারেনা সেতাই চুপ করে থাকেভালই লাগে তার ভাবতে যে নিবিড় আর অনন্যার মধ্যে কিছু একটা আছেকারণ বন্ধুর হৃদয় সে একবার ভেঙ্গে দিয়েছে, তা আবার জোড়া লাগুক এটা সে আন্তরিকভাবেই চায়
বেশ কিছুদিন পরনিঝুমের বাবার অপারেশন হয়ে গেছেবাসায় নিয়ে আসা হয়েছে তাঁকেএখন দেড় মাসের বিশ্রাম শুধুঅনেকেই আসছে দেখতেনিবিড় আর তার মাও আসেন এক বিকেলেএসে আঙ্কেলের সাথে দেখা করে নিঝুমের সাথে ওর রুমে চলে আসে নিবিড়এই কথা সেই কথার পর অনন্যার কথায় আসেওর কথা শুনে নিঝুমের মনে হয় অনন্যাকে ভাল লাগতে শুরু করেছে তারতাই খুনসুটি করে আবারঅনন্যাকে নিবিড়ের বউবলে ডাকা শুরু করেনিবিড়ের দিক থেকেও তেমন আপত্তি দেখা যায় নাতার কাছে এটা শুধুই নিঝুমের দুষ্টুমিতাই সে-ও সাড়া দেয় এই দুষ্টুমিতেকথায় কথায় নিবিড়কে আবারও স্যরি বলে নিঝুম রূপার ব্যাপারটা নিয়েসেই ঘটনার পর আজই তাদের প্রথম দেখাতাই সামনাসামনি ক্ষমা চেয়ে নেয় নিঝুমকিন্তু নিবিড় তাকে একটা অদ্ভুত কথা বলে, “তুই কখনও স্যরি বলবিনা নিঝুতোর মুখে স্যরি মানায় নাতুই স্যরি বললে তোকে বড় দুর্বল লাগেএক মুহূর্ত নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে নিঝুমতারপর চোখ সরিয়ে কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে নিবদ্ধ করে আবার, নিবিড়ের মোবাইল থেকে কম্পিউটারে গান নিচ্ছে সেবুঝতে পারে নিবিড় এখনও তার দিকে তাকিয়ে আছেকান লাল হয়ে উঠতে থাকেনিবিড় তা পরিস্কারভাবেই দেখতে পাচ্ছেতাও চোখ সরায় নাকিছুক্ষণ কোন কথা বলে না দুজনের কেউইঅস্বস্তি চেপে ধরতে থাকে নিঝুমকেমরিয়া হয়ে কথা খুঁজতে থাকে সেআকাশের কথা তোলেএবং ভুলটা করেনিবিড় আবার খেপে যায় নিঝুমের হাতটা মাউসে ধরে ছিল সেএক ঝটকায় মাউসটা ঠেলে সরিয়ে দেয়তবে নিজের হাতের নিচ থেকে নিঝুমের হাতটা সরায় নাআলতো করে চাপ দিয়েই রাখে বলে, “দ্যাখ নিঝুম, এই ছেলেকে আমার ভাল লাগেনাতুই কেন ওকে মেসেজ দিস আর আমাকে একটা খোঁজও দিস না?” আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই নিঝুম কাজ আছেবলে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়ফিরে এসে দেখে কম্পিউটার টেবিলের সামনের চেয়ারে নিবিড় বসে আছেবিছানা কম্পিউটার থেকে অনেক দূরে ওখানে বসলে কথা বলে আরাম পাওয়া যাবেনাঘরে একটাই মাত্র চেয়ারচেয়ারের পাশে ছোট্ট একটা টুলনা বসে টুলের এপাশের দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় নিঝুম চুপচাপওর সাড়া পেয়ে নিবিড় মুখ তোলেজিগ্যেস করে, “আমার প্রশ্নের উত্তর দিলি না তুই?” খুব ভালভাবেই বুঝতে পারে নিঝুম, কোন প্রশ্নের কথা বলা হচ্ছে কোন ভণিতায় যায় না সেসরাসরি বলে, “তোর সাথে আমার সম্পর্কটা কী নিবিড়? যে রোজ খোঁজ দিতে হবে? আমি আমার সব বন্ধুকেই, যাদের মোবাইল আছে, তাদের মিসডকল দিই প্রায়ইবৃষ্টির সাথে তো তোর এখন যোগাযোগ হয় নাওর আর আমার মধ্যে তো রীতিমত কম্পিটিশন হয় মিসডকল দেওয়ারতবে ও তো কখনও এভাবে খেপে যায় না একদিন মিসডকল না দিলেমন খারাপ করে অবশ্য, পরদিন ক্লাসে গেলে বলে যে আগের দিন ওর মিসডকলের রিপ্লাই দিইনি কেন?সেটা অন্য জিনিসতুই তো আমাকে একদম বকা দিসআর আকাশকে নিয়েই বা তোর এত লাগে কেন? তুই খুব ভালমতই জানিস আকাশ একজনকে পছন্দ করেওর আর আমার মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছু ছিল না, নেইও আগেও বলেছি এটা, এখনও বলছি, সারাজীবন বলবআর তুই সেদিন বললি তুই নাকি আকাশকে নিয়ে জেলাসকিসের জেলাসি তোর? ও তোর বেস্টফ্রেন্ডকে কেড়ে নেবে ভাবছিস? ভেবে থাকলে আর ভাবিস নাআমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু তুই ছিলি, তুইই থাকবি আজীবনআর এটা তুই খুব ভালভাবেই জানিসতাও কিসের জেলাসি তোর ওকে নিয়ে? এমন যদি হত যে আমি তোর গার্লফ্রেন্ড জাতীয় কিছু তাও নাহয় এক কথা ছিল কিন্তু তুই তো অনন্যার প্রতি দুর্বল, তাহলে আমাকে নিয়ে তোর কেন এত হিংসা করতে হয় আকাশকে? আজ আমার উত্তর চাই নিবিড় সব প্রশ্নেরএকসাথে এতগুলো কথা বলে একটু ক্লান্ত হয়ে পরে নিঝুমচুপ করে যায়নিবিড় উঠে দাঁড়ায়ভীষণ রাগে মাথায় আগুন জ্বলছেইচ্ছে করে নিঝুমকে দেওয়ালটার সাথে চেপে ধরে কঠোর শাস্তি দেয়কিন্তু কিছুই করেনা সেওর আর নিঝুমের মাঝে টুলটা আছেপা দিয়ে ওটাকে সরিয়ে দিয়ে নিঝুমের কাছে আসেফরসা মুখটা ঈষৎ রক্তিম হয়ে আছে নিঝুমের মতে সে সুন্দরী না হলেও তার বন্ধুবান্ধবদের মতে সে অন্য অনেকের চেয়ে অনেক সুন্দরী, কিউট যাকে বলেকপালের উপর একগোছা অবাধ্য চুল এসে পড়েছে, রাগের কারণে নাকের পাটা একটু ফুলে আছে আর ছোট্ট গোলাপি ওষ্ঠাধর চেহারা থেকে শিশুসুলভ নিষ্পাপ ভাবটা এখনও যায়নিএই কমনীয়তা তার সৌন্দর্যে আলাদা একটা মাত্রা এনে দিয়েছেসাঁঝের আলো-আঁধারিতে নিরাভরণ, কোনরূপ প্রসাধনহীন হওয়া সত্ত্বেও নিঝুমের সহজ, সাধারণ, স্বচ্ছ রূপ যেন নির্মল এক আলো ছড়াচ্ছেকিছু একটা বলতে যেয়েও এই মুখের দিকে তাকিয়ে বলা হয় না নিবিড়েরঅপলক চোখে শুধু তাকিয়ে থাকেকয়েক মুহূর্ত আগেই যাকে শাস্তি দিতে ইচ্ছে করেছে নির্মম কঠোরতায়, এই মুহূর্তে তাকেই ভীষণ ভীষণ আদর করে দিতে ইচ্ছে করছেনিঝুমও চোখ তুলে সরাসরি নিবিড়ের চোখে তাকায়তবে সে দৃষ্টিতে রয়েছে কাঠিন্য, রয়েছে একরাশ প্রশ্নদীর্ঘ কয়েকটা মুহূর্ত চোখে চোখে তাকিয়ে থাকে দুজননিবিড়ের গভীর দৃষ্টির সামনে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেনা নিঝুমচোখ নামিয়ে নেয়আবার নীরবতা নেমে আসে ওদের মাঝেকিন্তু এই নির্বাক মুহূর্তগুলো দুই কিশোরকিশোরীর মনের গহীনেই ছাপ ফেলে যেতে থাকে
নিঝুমের চোখে কী খুঁজছে নিবিড় আসলে? অনন্যার জন্য ঈর্ষা? না নিজের জন্য ভালোবাসা? না, ঈর্ষা সে দেখেনিকিন্তু দ্বিতীয়টা দেখেছেআর দীর্ঘদিন চেনার কারণে এটাও দেখেছে যে মেয়েটা নিজেই তা দেখতে পারছেনাকী করেই বা পারবে? প্রথমত নিবিড় তার অবলম্বন, সে নিজে অনেক চাপা স্বভাবের মেয়েনিজের ব্যাপারে অনেক ধারণাই তার পরিস্কার নয়নিবিড় সেগুলো বুঝতে তাকে সাহায্য করেছে সবসময়আর দ্বিতীয়ত, এটা দেখার কোন প্রশ্নই ওঠে না, কারণ এটা সম্ভব নয় কোনদিনই, কোন অবস্থায়ইএই সম্ভাবনা কোনদিন নিঝুম ভাববেও নাস্বাভাবিক অবস্থায় ভাবার কারণই নেই কোনতাও সে চায় নিঝুম বুঝুক যে সে তাকে ভালবাসে দীর্ঘ নীরবতা ভাঙ্গে নিবিড়, “আয়নায় নিজেকে দেখেছিস কখনও?” এরকম অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নে অবাক হয় নিঝুমমুখ তুলে চায় আবারজিগ্যেস করে, “মানে?” “না কিছুনা”, বলে আবারও নিঝুমকে রহস্যের অতল অন্ধকারে ফেলে চলে যায় নিবিড়
ওরা চলে যাওয়ার পরেও বহুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে নিঝুমনিবিড় তাকে ভালবাসে তবে? এই কি সে বুঝিয়ে গেল? সরাসরি জিগ্যেস করবে ভাবে সেকিন্তু এরপর যেদিন কথা হয় নিবিড়ের সাথে, সেদিন কিছু জিগ্যেস করার আগেই তার এই ভুল ভেঙ্গে যায়নিবিড়ের মুখে শুধু অনন্যার কথাই শুনতে পায় সেতারা বলে দেখা করবেঅনন্যা নাকি বারবার জোর করছে দেখা করার জন্যনিবিড় যদিও দেখা করেনা, কিন্তু কথায় বারবার বুঝিয়ে দেয় যে দেখা করার ইচ্ছে তারও আছে অনন্যার সাথে আর কিছু জিগ্যেস করেনা তাই নিঝুমনিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেকেই দেয় সে, “নিবিড় ভালবাসেনা আমাকেঅনন্যার মত মেয়ে থাকতে আমাকে ভাল লাগার কোন প্রশ্নই ওঠে নাআর সবচেয়ে বড় বাধাটা তো আছেইসেটা অতিক্রম করা কি আদৌ সম্ভব? না মনেহয়সুতরাং সবই আমার কল্পনাআপনমনেই হেসে ওঠে সেবন্ধুর সাথে আবার দুষ্টুমি করে অনন্যাকে নিয়েএই ভালএই তো সে ভাল আছে নিবিড়কে ভাল দেখে
পরীক্ষার আর বেশি দেরি নেইসম্পূর্ণরূপে পড়াশোনায় নিজেকে নিমজ্জিত করে রাখে নিঝুমমাঝে মাঝে কথা হয় নিবিড়ের সাথেভীষণ প্রেসার সবার মাথায়ই পরীক্ষা নিয়েকিন্তু এর মাঝেই আবার নিবিড় তাকে দ্বিধায় ফেলে দেয়আজকাল আকাশের সাথেও একটু একটু কথা বলে নিঝুম ফোনেনিবিড়কে তা বলার সাথে সাথে সে তার উপর আদেশ জারি করে, “তুই আকাশের সাথে আর কোনদিন কথা বলবিনা ফোনেপ্রচণ্ড অবাক হয় নিঝুম নিবিড়ের এহেন আচরণেজিগ্যেস করে বারবার যে কী হয়েছেনিবিড় একই উত্তর বারবার দেয়, “আমি বলেছি ব্যসআর কোন প্রশ্ন করেনা নিঝুমনিবিড় তার অনেকদিনের বন্ধু, সবচেয়ে ভাল বন্ধুওর কথা সে কোনদিন ফেলেনিতাই বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয় এই কথাওআকাশের মেসেজে অনেক কাকুতিমিনতি সত্ত্বেও আর ফোন দেয়না তাকেবলে দেয় যে নিবিড়ের কথার উপর কোন কথা সে বলবেনা, নিবিড় তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণহতাশ হয় আকাশসরাসরি নিবিড়ের সাথে কথা বলবে ঠিক করেকিন্তু নিবিড় ওর ফোন ধরেনামেসেজও রিপ্লাই করেনাপরে কথা বলবে আবার ভেবে আপাতত আর কিছু করেনাতবে নিঝুমের কাছে মেসেজ দিয়ে নিবিড়ের ব্যাপারে উল্টোপাল্টা কথা বলতে ছাড়ে নাবলে, “নিবিড় তোকেও পছন্দ করে, আবার অনন্যাকেও পছন্দ করেতোকে নিয়ে খেলছে ওঅসম্ভব রেগে যায় নিঝুমআকাশকে বলে দেয়, “খবরদার একটা বাজে কথা বলবিনা তুইনিবিড় আমাকে পছন্দ করে না, অনন্যাকেই করেএর প্রমাণ আমি বহুবার পেয়েছিআর নিবিড় কাউকে নিয়ে খেলার মত ছেলেই নাসো ডোন্ট ইউ ডেয়ার টেল এনিথিং এগেইন্সট হিমনাহলে তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব শেষএখন মেসেজ তো দিচ্ছিআর একটা বাজে কথা বললে সেটাও দেব না মনে রাখিসঅবস্থা বেগতিক দেখে আকাশ নিবিড়কে নিয়ে আর কোন কথা বলেনা এরপর থেকে নিঝুমকেকারণ এই কয়দিনে সেও বুঝে গেছে নিঝুম এক কথার মানুষযা বলে তা করে ছাড়ে
মাঝে পড়াশুনার চাপে নিবিড়কে খোঁজ দিতে পারেনি নিঝুমবাসায় অসংখ্য মিসডকল এসেছেকিন্তু দেবে দেবে করেও নিঝুমের আর মিসডকল দেওয়া হয়ে উঠেনি তবে খুব তাড়াতাড়িই কথা হয় তার নিবিড়ের সাথে, মা-বাবা বাইরে গেলেনিবিড় অভিমান করে, “খোঁজ দিস নি কেন?” নিঝুম বলে, “ব্যস্ত ছিলাম রেস্যরি কিন্তু তোর তো অনন্যাই আছে, আমার খোঁজ আর চাস কেন?” নিবিড় সেরকম অভিমানী অথচ আদুরে কণ্ঠেই বলে, “আমার ভাল লাগেনা তোর খোঁজ না পেলে” “কেন লাগেনা? আমি কি তোর গার্লফ্রেন্ড? তোর গার্লফ্রেন্ড তো অনন্যাএই কথার কোন উত্তর দেয়না নিবিড় যথারীতিনিঝুম একটা নিঃশ্বাস ফেলে চুপ হয়ে যায়এ কী হচ্ছে তার সাথে? কেন এত দ্বিধাদ্বন্দে পড়ছে বারবার? তবে কি আকাশের কথাই ঠিক? নিবিড় খেলছে তাকে নিয়ে? না না, এ কীভাবে হয়? নিবিড়কে তো সে চেনেআসলে এতদিনের বন্ধু তো, তাই এমন করে; নিজেকে বুঝ দেয়
পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়অনন্যা আর নিঝুমের সীট একই রুমে পড়েছেওর কাছ থেকে নিবিড়ের কথা শুনতে পায় নিঝুমনিবিড় নাকি তাকে জানুবলে ডাকে আজকাল নিবিড় নাকি তার উপর ফিদাভালই তো, ভাবে সেযদিও বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়না অনন্যার কথা, কারণ সে খুব ভালমতই জানে যে নিবিড় এমন ছেলে নাআর অনন্যারও তো বয়ফ্রেন্ড আছেএকটা এংগেজড মেয়ের সাথে প্রেম করার মত ছেলে নিবিড় না আবার পরক্ষনেই ভাবে যে অনন্যার তো মিথ্যা বলার কোন কারণ নেইহয়তো আসলেই নিবিড় ওকে পছন্দ করেহতেই পারে, প্রেম তো আর বলেকয়ে হয় নাআশ্বস্ত হয় কিছুটাতাই নিবিড়কেও আর কিছু জিগ্যেস করেনা সেকিন্তু বিধিবামবিধাতা অলক্ষ্যে থেকে বোধহয় মুচকি হাসেন নিঝুমের স্বস্তি দেখেসে কারণেই পরীক্ষার মাঝেও আরও কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দেন তাকেঅনন্যা হঠাৎই একদিন পরীক্ষার পর একসাথে হল থেকে বেরুনর সময় বলে যে নিবিড় নাকি তার কাছে সুইসাইড করার সবচেয়ে সোজা উপায় জানতে চেয়েছেকারণ আকাশ তাকে বলেছে যে নিবিড় শুধুই নিঝুমের একজন বন্ধু, আর সব বন্ধুর মতইতাহলে নিঝুমকে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার কী আছে নিবিড়ের? নিঝুম ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পরে এই কথা শুনেঅনন্যাকে বলে নিবিড়কে বলতে যে সে অনুরোধ করেছে এমন কিছু না করতে, সে নিজে কথা বলবে তার সাথে অনন্যার পরের কথা শুনে নিঝুমের মনে হল তার গালে কেউ ঠাস করে একটা চড় কষিয়ে দিয়েছে, “তুমি তো নিবিড়ের কেউ নাতোমার মানা ও কেন শুনবে?” মুখে কিচ্ছু বলেনা নিঝুমঅপমানটা হজম করে নেয়ভাবে যে অনন্যার এরকম বলার অধিকার আছে নিশ্চয়ই নিবিড়ের জীবনে, কারণ ওরা পরস্পরকে পছন্দ করেকিন্তু একটা বোবা কান্না ঠেলে ওঠে বারবার বুকের ভেতরবারবার মনে হয়, এতদিনের বন্ধুত্বের এই মূল্য দিল নিবিড় যে বাইরের একটা মেয়ে তাকে অপমান করতে সাহস পায়? নিজের উপরই ধিক্কারে ভরে ওঠে মন এতদিন এটা ভাবেনি বলে যে গার্লফ্রেন্ড হলে অনেকদিনের পুরনো বন্ধুকে মানুষ খুব সহজেই ভুলে যেতে পারে, নিবিড়ও যে এমনটা করবে এটা কেন সে ভাবলনা তবে? এত কেন শিওর হল সে নিবিড়ের সম্পর্কে যে নিবিড় তাদের বন্ধুত্বকে অসম্মান করতে দেবেনা কাউকে? ছি নিঝুম ছি! নিজের উপর অদ্ভুত ঘেন্না হতে থাকে তার……...........চলবে

1 comments: