Story- আমার অনন্ত নিঝুমতা – ১


আমার অনন্ত নিঝুমতা – 

 একটা থাপ্পড় খাবি ফাজিল!!”, চেঁচিয়ে উঠে নিঝুমসাথে সাথে অবশ্য নিবিড়ের উত্তরটাও পেয়ে যায়,”তোর একারই হাত আছে, তাই না?” এরপর মারামারি, আর আরও আরও ঝগড়াঝগড়া করতে করতে দুজন ভুলেই যায় যে আসলে ঝগড়াটা কী নিয়ে শুরু হয়েছিলকিছুক্ষণ পরেই দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্যকার কী একটা কথায় হাসির ফোয়ারা ছুটেছে একটু আগের ঝগড়া রত দুই কিশোরকিশোরীর মাঝেহ্যাঁ, ওরা এরকমই নিবিড় আর নিঝুমএই ঝগড়া, এই ভাব, এই রোদ, এই বৃষ্টিএদেরকেই হয়তো bestfriend বলা চলেসেদিন বাড়ি ফেরার সময় বের হয়ে গাড়ি খুঁজে না পেয়ে নিঝুমের মা হঠাৎ নিবিড়কে বলে বসেন,”বাবা যাও তো তোমার girlfriend এর সাথে যেয়ে গাড়িটা কই দেখো তো!কথা শুনে দুজনেই হাবলে কী মহিলা! এদিকে নিবিড়ের মাও হেসে দিয়েছেন এই কথা শুনেকিন্তু যাদের নিয়ে এই রসিকতা, তাদের কারো চেহারাতেই খুশির ছাপ দেখা গেল নাবরং আবার একচোট ঝগড়া হয়ে গেল এই নিয়ে
নিবিড়-ওই তুই আমার girlfriend হইলি কবে?? তুই আমার girlfriend না
নিঝুমও সমান তেজে উত্তর দেয়-এহ আমার বয়ে গেছে তোর girlfriend হতে!
ভাগ্যক্রমে তখনই গাড়িটা পেয়ে যায় ওরামারামারিটা তখনকার মতো স্থগিত থাকেযে যার বাসায় চলে যায় মায়ের সাথে
নিঝুম আর নিবিড়সেই ছোট্টবেলা, মানে নার্সারিতে পড়ার সময় থেকেই বন্ধু বন্ধু না বলে শত্রু বলাই হয়তো ভালো, কারণ এত ঝগড়া আর মারামারি শত্রুরাও করে কিনা সন্দেহতারপরও ওরা কিন্তু বন্ধু!! ছোটবেলায় একই স্কুলে পড়ার সুবাদে দুজনের মধ্যে একটা বন্ধুত্বগড়ে উঠে তাদের মায়েদের কল্যাণেমাঝে স্কুল বদলের কারণে নিবিড় আর নিঝুমের যোগাযোগে ভাটা পড়লেও মায়েদের সম্পর্ক অটুট ছিলতারপর নিবিড়ের বাবা হঠাৎ করে মারা যাওয়ার পর যোগাযোগটা আবার বেড়ে যায় দুজনের, কারণ দুই বাড়ির মানুষদের যাওয়া আসা বেড়ে যায়উপরোক্ত কথোপকথনটি ওদের সেই আবার বন্ধুত্বের সময়ের
ছোটবেলায় সাইকেল চালানর কারণে নিঝুম নিবিড়ের থেকে একটু লম্বা হয়ে গিয়েছিল কিন্তু এখন নিবিড়ই বেশ লম্বাতবে নিঝুম সে যে লম্বা ছিল এটা শুনাতে ছাড়ে না যখনই নিবিড় ওকে খাটো বলে খেপায়বেশ দেখতে নিবিড়অন্তত অন্য মেয়েদের চোখে তো বটেইচশমার ওপাশে চোখ দুটো বড় কাছে টানেঅনেক মেয়ে আবার তার উপর ফিদাও! ভদ্র ছেলে বলে সুনাম আছে নিবিড়েরনিঝুম আবার ঠিক উলটোভালো দেখানর ধারেকাহেও নেইতবে খুব সেনসিটিভ নিঝুমখুব অল্পেই যেমন রেগে যায়, তেমনি খুব অল্পতেই অসম্ভব খুশি হয়ে যায়নিঝুমের রাগ মানে চুপ হয়ে যাওয়া, খুব রাগ হলে সে চুপ হয়ে যায়, যার উপর রাগ তার সাথে কথা বলেনাআর যতসব অদ্ভুত খেয়ালের সমাহার নিঝুমবন্ধুদের মতে,”পাগল!আহামরি চেহারা না নিঝুমের, মডার্নও না, বরং একটু ব্যাকডেটেডই বলা চলে নিঝুমকেসুতরাং তার কোন স্তাবক থাকার প্রশ্নই উঠে নাএতে ওর কিছু যায় আসেও নাতার কথা, প্রেম মানুষে করেনানিবিড়ের উপর যতই মেয়ে ফিদা হোক না কেন, নিঝুম কিন্তু ফিদা হওয়ার মতো কিছু দেখতে পায়না কখনওআসলে জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই যে মুখ দেখে আসছে, সে মুখে অচেনা কিছু দেখা সম্ভব ছিলনা নিঝুমের জন্যনিবিড়কে নিয়ে তার একটাই আফসোস-ইসসি রে! নিবিড় টা আমার থেকে লম্বা হয়ে গেল ধুর!!!
নিবিড় যে কোচিঙে পড়ে, মোটামুটি নিঝুমের অনিচ্ছাতেই তার মা মেয়েকে ওই কোচিঙে ভরতি করে দিলেনপ্রথমদিনেই নিবিড় একটা অদ্ভুত কাণ্ড করে বসে নিঝুমের মা গেছেন ভিতরে টিচারের সাথে কথা বলতেওরা বাইরে গল্প করছেগল্প আর কী, খুনসুটি আর একে অন্যের পিছে লাগাকথা বলতে বলতে হঠাৎ নিবিড় নিঝুমের একটু কাছে সরে আসেনিঝুম ভয় পেয়ে যায়, আর কোন চিন্তা মাথায় আসার আগে এটা মাথায় আসে ওর যে মারবে নাকি রে বাবা!!! আগের দিন কি কোন ঝগড়া আন্সল্ভড ছিল নাকি!!! কিন্তু নিবিড় কিছু করেনাকথা বলে যায় আগের মতইনিঝুম এদিকে একটা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো, পিছাতেও পারছেনাবড়ই অস্বস্তিকর অবস্থা নিবিড়কে বলে,”ওই তুই সরে দাঁড়া, মানুষ অন্য কিছু ভাববেনিবিড় বলে, “ভাবুকসরেনা সেনিঝুম বুঝে বন্ধু নিশ্চয়ই কোন মেয়েকে জেলাস করানোর চেষ্টা করছে, পাশেই তো মেয়েদের একটা ক্লাস দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকে ওদের সরাসরি দেখা যায়এই সময় কোচিং থেকে নিবিড়ের এক বান্ধবী বের হয়নিঝুম ফাজলামির সুযোগ পেয়ে যায়বলে,”ওই দেখ তোর girlfriend.” নিবিড় হেসে দেয়, “ আমার girlfriend?” বলে সেও যোগ দেয় খুনসুটিতে নিঝুমের সাথে
নিবিড়ের মোবাইল থাকলেও নিঝুমের নেইকোচিঙে ভর্তি হয়েছে দেরি করে পিছিয়ে গেছে তাই একটু নিঝুমনিবিড়ের সাহায্য দরকারতাই ল্যান্ডলাইনে ফোন করে নিঝুম দরকার হলেরোজই কথা হয় বলতে গেলেকথার বেশিরভাগ জুড়েই থাকে পড়াশুনোআর মাঝে মাঝে নিঝুমের কোন বান্ধবীর কোন ছেলেকে পছন্দ হলে নিঝুমের নিবিড়কে অনুরোধ,”তুই না ভালো? দে না একটু অমুকের খোঁজটা বের করে প্লিস প্লিস প্লিস!এরকম এক সন্ধ্যায় কথা বলছে দুজনহঠাৎ কী নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়এক পর্যায়ে নিঝুম বলে,”আমি আর জীবনে তোর সাথে কথা বলবনা!এর উত্তরে নিবিড় যা বলে, তা শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থ হয়ে থাকে নিঝুম-হ্যাঁ, আমার সাথে কথা কেন বলবা?? যাও যেয়ে শিহাবের সাথে কথা বলগে যাও!
শিহাব! চমকে উঠে একটু নিঝুমশিহাবের কথা এখানে কেন আসলো? হ্যাঁ, শিহাব বলতে একটি ছেলের খোঁজ সে নিবিড়ের কাছে চেয়েছিল বটে, তবে সে তো তার বান্ধবীর জন্যসে নিজে তো শিহাবকে চেনেইনা, কথা বলতে যাওয়া তো বহুদুরের ব্যাপার তাহলে? নিবিড় এভাবে বলল কেন? “দুত্তোর! ঝগড়া লাগানোর আর জায়গা পায়না! যত্তসব!”, ভেবে আবার পড়ায় মন দেয় নিঝুম
দিন যায়কথা আজকাল ল্যান্ডলাইনের বাইরেও ডালপালা মেলতে শুরু করেছে নিঝুম বাসার কারো মোবাইল থেকে নিবিড়কে মেসেজ দেয়, নিবিড় তা রিপ্লাই করে তবে কেন যেন আজকাল মায়েদের অগোচরেই চলছে এই মেসেজিংকথার বিষয়বস্তু কিন্তু একই আছেইতিমধ্যে নিঝুমের গুটিকয়েক বান্ধবীর সাথে মোবাইলে পরিচয় হয়েছে নিবিড়েরতবে তাদের সাথে কী কথা বলে নিবিড়, তা কখনো জানতে চায়না নিঝুম
মারা খুব ভালো বন্ধু হওয়ার কারণে নিবিড়দের বাসায় প্রায়ই যাওয়া হয় নিঝুমদেরএমনই একদিন গেছে মায়ের সাথেনিবিড় বাসায় নেইনিঝুম আবার বরাবর একটু ছটফটেএক জায়গায় সুস্থির হয়ে বসে থাকা যেন তার ধাতে নেইএই অস্থিরতার কারণে মুভি পর্যন্ত দেখেনা সেযাই হোক, নিবিড় তো নেই, কী করবে এখন নিঝুম? খানিকক্ষণ এঘর ওঘর ঘুরাঘুরি করে চোখ পড়ে নিবিড়ের টেবিলের দিকে কাগজপত্র স্তুপ হয়ে আছেইস কী অগোছালো হয়ে আছে!”, ভাবে নিঝুমভাবখানা এমন, নিজে যেন খুব গুছানো মেয়ে! তবুও, নিবিড়ের টেবিলটা সে গুছানোর চেষ্টা করেকিন্তু কাগজ ঘাটাই সার হয়, গুছানো আর হয়না, অত ধৈর্য কোথায় তার? যেখানকার কাগজ সেখানে রেখে দেয় আবারইতিমধ্যে নিবিড় এসে গেছেসময় কাটানো আর কষ্ট হয়না নিঝুমের
পরদিনআবার কথা হচ্ছে নিবিড়ের সাথেনিঝুমের নোট দরকার একটানিবিড় বলে,”দাঁড়া খুঁজিনিঝুমের হঠাৎ মনে পড়ে যায়, নোটখানি তো সে কালই দেখে এসেছে নিবিড়ের টেবিলেজানায় সে কথা,”অ্যাই তোর টেবিলে একটা খাম আছে না? তার নিচে দেখ নোটটা আছেনিবিড় বলে,”তুই আমার টেবিলে হাত দিয়েছিলি?” নিঝুম-হু দিয়েছি তোসাথে সাথে কেমন রেগে যায় নিবিড়,”কেন?? তুই আমার টেবিলে হাত দিলি কেন? আর কখনো ধরবিনা আমার জিনিসযা তুই আর আমার বাসায়ই আসিস না কখনো
অভিমানী নিঝুমনিবিড়ের এমন কথায় কষ্ট পায়তবে কষ্টটা চেপে রাখে নিজের ভিতরেইমুখে কিছু বলেনা, কিন্তু এরপর বহুদিন আর নিবিড়ের বাসায় যায়নি সে আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে,আর কখনো নিবিড়ের কোন কিছুতে সে হাত দেবেনা
আকাশতালঢ্যাঙা একটি ছেলেএকই স্যারের বাসায় পড়তে যেয়ে নিঝুমের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে তার নতুন নতুননিঝুম নতুন বন্ধু পেয়ে মহাখুশি মনেই নিবিড়কে জানায় আকাশের কথাকিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে নিবিড় আকাশকে কোনমতেই সহ্য করতে পারছেনাকেন, তা হাজার জিগ্যেস করেও কোন সদুত্তর পায়নি নিঝুম নিবিড়ের বারবার সেই একই কথা, “আকাশ ভালো না, ওকে আমার ভালো লাগেনাআকাশের তরফ থেকেও নিবিড়ের প্রতি খুব একটা পছন্দনীয় মনোভাব দেখা যায় নাঅথচ দুজনের কেউ কাউকে চিনেনা, জীবনে দেখেওনি, নামও শুনেনিওদের মাঝে শুধু নিঝুমই কমনএকে অপরের কথা তারা নিঝুমের থেকেই জেনেছেসেদিন মার অনেক চাপাচাপির পর নিঝুম যেতে রাজি হয় নিবিড়ের বাসায়আরও দু-একজন বন্ধু বান্ধব আসে ছোটবেলার, আড্ডা হয়সব ছাড়িয়ে নিবিড়ের বক্তব্য শুনে গা টা জ্বলে উঠে নিঝুমের-আকাশ যে তোর boyfriend না তার প্রমাণ দেকিন্তু নিজেকে সামলে নেয় সেবলে,”আমার boyfriend হলে সবার আগে তোরই জানার কথা নিবিড়নিবিড় তবুও মানেনাবলে,”প্রমাণ করনিঝুম বলে,”কীভাবে প্রমাণ করব আমি? সমস্যা কোথায় তোর??? আমার এমন কেউ থাকলে তুই জানবিনা এটা কেমন করে হয়??” বলে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়
ফেরার সময় সেদিন একটা অভাবনীয় ঘটনা ঘটেওদেরই এক বান্ধবী, লিসার ছোট্ট ভাগ্নিকে নিয়ে এসেছিল সে নিবিড়ের বাড়িতে আসার সময়ভীষণ কিউট বাচ্চাটাকে নিঝুমের ভালো লেগে যায়ফেরার সময় মারা নেমে গেছেন আগে, নিঝুম লিসা আর নিবিড় গল্প করতে করতে নামেসিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বাচ্চাটার গালে ছোট করে একটি চুমু এঁকে দেয় সে, গাল টিপে দেয়নিবিড় একটু উপরে ছিলসে নিঝুমকে ডাকে,”এই তুই একটু উপরে আয় তোঅবাক হলেও চুপচাপ নিবিড়ের কথা মানে নিঝুম উপরে যায় নিবিড়ের কাছে,”কী? ডাকলি কেন?”
-”ওই জায়গায় আকাশ হলে ভালো হতনা?”, নিঝুমের কানের কাছে মুখ এনে বলে নিবিড়প্রচণ্ড রাগে একটা মিনিট কোন কথা বলতে পারেনা নিঝুমএরপর সিঁড়ির আধো আলো আধো অন্ধকারে ঠাসকরে একটা শব্দআর একটা কথাও না কারো মুখ থেকে দুদ্দাড় করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে চলে যায় নিঝুমবাসায় ফিরে একটা মেসেজ দেয় নিবিড়কে,”তুই আমাকে এরকম ভাবতে পারলি?” কোন রিপ্লাই আসেনা সেই মেসেজেরচড় খেয়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল নিবিড়আজ পর্যন্ত কেউ তাকে এত নীরব, অথচ এত সশব্দ প্রতিবাদ জানাতে পারেনি কোন বিষয়েআর নিঝুম কিনা…? তবে একটা ব্যাপারে সিওর হয়ে যায়, না নেই কিছু নিঝুমের মনে কারো জন্যজানেনা কেন, কেমন একটা খুশির বাতাসও ছুঁয়ে যায় চড় খেয়ে অপমানে জ্বলতে থাকা গালটাকেতবে পরক্ষনেই আবার সেই জ্বালাটা ফিরে আসে নিঝুমের মেসেজ দেখেচড় মারলি কেন তুই আমাকে??”-লিখতে যেয়েও লিখলনানিঝুমের সাথে আর কোন কথা বলবেনা, ঠিক করে সে
দুদিন যায়তিনদিনকোচিঙেও কোন দেখা নেই, বাসার সবাইকে লুকিয়ে মোবাইলও চেক করে নিঝুমকোন মেসেজ নেই
চড়টা কি বেশি জোরে হয়ে গেছে? আমার হাত তো আবার চড় মারার জন্য বিখ্যাতআচ্ছা বেশি রিঅ্যাক্ট করে ফেললাম নাকি? নাহ যা করেছি একদম ঠিক করেছিআনটি কে ডেকে যে মার খাওয়াইনি, এটাই বহুতকিন্তুহশালার পেটে পেটে এত রাগ কেন? ব্যাটা তুই তো দোষ করেছিস বলেই থাপ্পড়টা খেলি, এখন নিদেনপক্ষে সরি তো বল! তা না, বাবুর উল্টা আমার উপরেই রাগ দেখান হচ্ছেদেখাক গাwho cares?!”- এমনি সব সাতপাঁচ ভাবে নিঝুম, ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ করতে যেয়েও রেখে দেয়
চারদিনের দিন আর ধৈর্য রাখতে পারেনা নিঝুমএকটা গুরুগম্ভীর মেসেজ পাঠিয়েই দেয়,”তুই কি আমার সাথে কথা বলবি? হ্যাঁ, নাকি না?” এরপর নিবিড় আর রিপ্লাই না করে কীভাবে? জানে তো মেয়ের জেদযদি না বলে, জীবনেও আর কথা বলতে আসবেনা তার সাথেমাঝ থেকে কোথাকার কোন আকাশের জন্য এতদিনের বন্ধুকে হারাতে হবেতারচেয়ে রিপ্লাই করেই দেওয়া যাক! তবেচড় মেরেছে যে সেই রাগটাও ভোলা যাচ্ছেনাথাক কী আর হবে রাগ করে, যে মেয়ে রে বাবা! একটু রাগ দেখিয়েই রিপ্লাই করি নাহয়, দুধের স্বাদ ঘোলে তো মিটুক!”, এই ভেবে রিপ্লাই করে দেয় নিবিড়-হুওপাশ থেকে রিপ্লাই আসে-গুডকিন্তু আমার সাথে রাগ দেখিয়ে লাভ নেইতোর এই রাগ আমি পরোয়া করবনাআর কোনদিন ওই রকম কথা বললে হাঁটুর মালাইচাকি ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিব মনে রাখিসআহা! কোথায় ভেবেছিল থাপ্পড় মারার জন্য স্যরি টরি বলে মেসেজ দিবে, তা না, এ কী! হে ঈশ্বর! এই মেয়ে এত দস্যি কেন??!”, ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয় বুক থেকে
আবার কাটতে থাকে সময়পুরনো ঝগড়া ভুলে বন্ধুত্ব আবার এগিয়ে যায়তবে আকাশের প্রতি বিদ্বেষের কোন পরিবর্তন হয়না নিবিড়েরবরং দিন দিন বেড়েই যায় আকাশকে নিয়ে নিঝুমের উচ্ছাস দেখেতবে সেদিনের মতো নিঝুমকে কষ্ট দিয়ে কথা বলেনা আর নিবিড়, সে খুব ভালভাবেই জানে এখন যে নিঝুমের এই শিশুসুলভ উচ্ছাস শুধুই নতুন বন্ধু পাওয়ার আনন্দ আর নিবিড়কে সব বলার আগ্রহতবুও, মনের কোথায় যেন খচখচ করেকেন করে, নিজেকে জিগ্যেস করেছে বহুবারউত্তর-জানিনা, বুঝিনা, বুঝতে চাইও না, আমি আকাশকে সহ্য করবনা ব্যসআকাশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশও করে ফেলে মাঝে মাঝে, কিন্তু নিঝুম আর পাত্তা দেয়না, তার মতে, বন্ধু বন্ধুইনিঝুম ভাবে, নিবিড় হয়তো মনে করছে আকাশ তার বন্ধুত্বকে কেড়ে নিবে কিন্তু নিঝুমের জীবনে নিবিড়ের যে জায়গা, সেখানে আকাশ তার হাজার ভালো বন্ধু হলেও বসতে পারবেনানিবিড় তা বুঝুক না বুঝুক, সে তো জানে নিবিড় তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, bestfriend. তার সিংহাসন তারই থাকবেতবে খুঁটিনাটি মান অভিমান যে চলেনা, তা নাএই তো সেদিনই নিঝুমকে আবার রাগিয়ে দিল নিবিড়না, আকাশকে নিয়ে নয়বান্ধবীর সাথে কী নিয়ে লেগেছে নিঝুমের, তা নিঝুমকে জিগ্যেস করায় উত্তর পায়নিপরে আবার নিঝুম একটু দরকারে কথা বলতে আসলে,প্রশ্ন করলে নিবিড় বিরক্তি দেখায়পরে জানতে পারে সেদিন নিঝুমের মন অনেক খারাপ ছিল বলে উত্তর দেয়নি, কারণ বৃষ্টি তার অনেক ভালো বন্ধু, নিবিড়ের মতো না হলেও কাছাকাছি তার সাথে কিছু হলে মন খারাপই লাগেকিন্তু নিবিড় তাকে এভাবে ভুল বুঝবে সে ভাবেনিএকটু মুখভার করে নিঝুমমেসেজ দিয়ে দেয়,”আমার ভুল হয়েছেআর কোনদিন তোকে কিছু জিগ্যেস করবনাস্যরি বিরক্ত করার জন্যবাইনিবিড় ভুল বুঝতে পেরে অনেক স্যরি বলে মেসেজ দিলেও উত্তর দেয় নাপরদিন কোচিঙে অঙ্ক পরীক্ষা ছিলনিবিড়ের সাথে কথা বলেনি বলে জানেনা সে আসবে কিনানিঝুম নিজের ক্লাস টাইমে যেয়ে বসে থাকেজানালার ধারের সীট তার খুব পছন্দসেখানেই বসে তাকিয়ে থাকে বাইরেএমন সময় দেখতে পায় নিবিড় আসছেবাইরে থেকে নিঝুমকে দেখতে পেয়ে হাসি দেয় একটানিঝুম অন্যদিকে তাকায়ক্লাসে ঢুকে আর কোনদিকে না যেয়ে সোজা নিঝুমের কাছে এসে বসে পড়েমাথায় আদুরে একটা চাঁটি মেরে আরও আদুরে গলায় বলে,”তুই এমন বাচ্চাদের মতো রাগ করিস কেন রে?” ব্যস, রাগ গলে জলমোটেও আমি বাচ্চাদের মতো রাগ করিনা”, প্রতিবাদ করতে যেয়ে হেসে ফেলে নিঝুম মান অভিমানটা বড্ড বেশিই যেন তাদের, তারপরও বন্ধুত্বটা বড় মধুর লাগে,নিবিড়ের ফার্স্ট বেঞ্চ আর নিঝুমের লাস্ট বেঞ্চ মিলেমিশে পরীক্ষা দিতে দিতে এরপর পুরো সময় জুড়ে এই কথাই ভেবে চলে
ওহহো আকাশ, তোকে না কতবার বলেছি ফোন নেই আমার? তাও বারবার ফোন দিসনা কেন বলার মানে কী?”, খাতায় কুনোব্যাঙের ছবি আঁকতে আঁকতে আকাশের প্রতি একটু ঝাঁঝিয়েই ওঠে নিঝুম
-”তোর সাথে কথা বলতে ভালো লাগেব্যাঙের ঠ্যাং ঠিক কর, বাঁকা হয়েছে”, আকাশ বলে
-”কই? খাতা বাঁকা……… তোদের সবার ভালো লাগানোর দায়িত্ব নিয়েছি নাকি আমি??”
-”আহা দোস্ত এমন করিস কেন? আসলে হয়েছে কী, ওই ব্যাপারটা নিয়ে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম, তাই বলছিলাম তোর ফোন থাকলে ভালো হত, ফোন করতে পারতি অথবা আমি ফোন করতে পারতাম তোকে
-”ও ওই ব্যাপার? তো সেটা আগে বলবেই পারতিসাতসকালে উঠে ফোন দিস না কেন রেকর্ডটা গ্রামোফোনে না চাপালেও তো পারতিআমি তো আসিই, তখন যা বলার বললেই হয়আর তুই কীভাবে দাবি করিস তোকে আমি ফোন দিব? জীবনে দিয়েছি? নিবিড়কেই আমি খুব দরকার লাগলে ফোন করি, তাও ল্যান্ডলাইনেআর তুই চাস আমি তোকে এমনি এমনি ফোন দিব!
-”আবার নিবিড়!
-”হ্যাঁ নিবিড়কেন তোর কোন সমস্যা হয়েছে নিবিড়ের কথা বলায়?? ভুলে যাস না ও আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, তোর সাথে বন্ধুত্বের অনেক আগে থেকে ওর সাথে বন্ধুত্ববুঝিনা বাবা একজন আরেকজনের নাম শুনলেই এমন খেপে যাস কেন তোরা!
-”আচ্ছা হয়েছে হয়েছে, এখন আমার কথা শুনবি তো নাকি?”
-”হু বল তোর কী কথা
এস এস সি পরীক্ষা সামনেইস্কুল শেষ, পরীক্ষা পূর্ববর্তী প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন স্যার ম্যাডামদের বাসায় আর কোচিঙে দৌড়াদৌড়ি চলছে খুব ছাত্রছাত্রীদেরতেমনই এক বায়োলজি স্যারের ভোর সাতটার ক্লাসে বসে উপরের কথাবার্তাগুলো চলছে নিঝুম আর আকাশেরঘুম ভেঙ্গেই মেঘলা আকাশ দেখে মনটা বেশ উড়ু উড়ু ছিল নিঝুমেরকিন্তু আকাশের প্রশ্ন শুনে মেজাজটা যায় বিগড়েনিঝুম ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথে আকাশের প্রশ্ন-তুই আমাকে ফোন দিস না কেন?” ব্যাটা তোর কাছে আমি ফোন করব চুক্তিপত্রে সই করেছি নাকি!-বলতে যেয়েও বলেনা নিঝুম সকাল সকাল মুড অফ করার ইচ্ছে হচ্ছিলনাতবে মেজাজটা খারাপ হয় ঠিকইকিন্তু ভালো হতেও সময় লাগেনা কালো মেঘে ঢাকা আকাশের ছায়ায় মন হারাতে হারাতে আর বন্ধু আকাশের সাথে পরবর্তী ক্লাসটাইম টকশো করতে করতে
আজকাল নিবিড় বেশ বাবুয়ানা দেখানো শুরু করেছে নিঝুমের সাথেকোচিঙের ক্লাস শেষসুতরাং দেখাও হয়নাসামনে পরীক্ষা, বাসায়ও যাওয়া হয়না তেমন একটাকিন্তু মেসেজ ঠিকই চলে দুজনারএখন অবশ্য পড়াশুনোই পুরো জায়গা দখল করে নেইঅন্য কথাও হয়তার মধ্যে নিবিড়ের দখলদারিত্ব প্রকটকিছুদিন হল তাদের মধ্যে মিসডকল মিসডকল খেলা শুরু হয়েছেখেলাটা যে কে আগে শুরু করেছে, বলা মুশকিলহয়তো নিঝুমইনিঝুম হঠাৎ হঠাৎ ল্যান্ডলাইন থেকে নিবিড়ের মোবাইলে ফোন করে একটা রিং বাজলেই ছেড়ে দিচ্ছেনিবিড়ও উত্তরে নিঝুমের ল্যান্ডলাইনে একটা রিং বাজাচ্ছেকোন নিয়ম নেই যে দিতেই হবেএটা শুধুই খেলাতাই মাঝে মাঝেই খেলেনা নিঝুমকিন্তু পরদিন মেসেজ দিতে গেলে একজনের রাগী রাগী মেসেজ আসে-কাল খোঁজ ছিলনা কেন?”
রিপ্লাই-মানে?”
আবার রিপ্লাই-মানে বুঝনা তুমি? কাল মিসদাওনি কেন?”
-”রোজ দিতে হবে এমন কোন নিয়ম আছে নাকি রে কোথাও?”
-”আছে
-”কোন শাস্ত্রে আছে? দেখা
-”আমার শাস্ত্রে আছেতুমি দিবে কি না? মেসেজ দিতে না পার, একটা মিসদিবে রোজ যেখান থেকেই পার
-”কেন?”
-”আমি বলছি তাইটেনশন লাগে
-”আজিব!টেনশন কেন লাগবে?”
-”জানিনাযা বলছি করবে ব্যস
হ্যাঁ, নিবিড় আর নিঝুমের ডিজিটাল চিরকুটের সংলাপগুলো আজকাল এরকমইমিসমানে মিসডকলইনশর্টআর দেখা যাচ্ছে বেশ উল্লেখযোগ্য একটা পরিবর্তনও হয়েছে; নিবিড় আজকাল নিঝুমকে মেসেজে তুমিকরে বলা ধরেছেনিঝুম অবশ্য নিবিড়ের চাপাচাপিতে হাজার চেষ্টা করেও পারেনি তুমি বলতেচার বছর বয়স থেকে তুইতোকারির সম্পর্ক, একদিনে বদলে দেওয়া যায় নাকি? আর দেবেই বা কেন? বন্ধুকে তুই করেই তো বলেনিবিড় হঠাৎ কেন তুমি করে বলছে, তা জিগ্যেস করায় উত্তর দিয়েছে, এমনিনিঝুম যেমন পাগল, বন্ধুও তার সঙ্গদোষে পড়ে পাগল হয়ে গেছে ভেবে আর কথা বাড়ায়নিসে যাই হোক, কথা হচ্ছে নিঝুমকে রোজ নিজের খোঁজ নিবিড়কে দিতেই হবে মিসডকল বা মেসেজ দিয়েতবে দুষ্টু নিঝুম কথা মানেনা প্রায়ইইচ্ছা করেই খোঁজদিতে ভুলে যায়না না, সবসময় না, মাঝে মাঝে তো এমনিতেই মনে থাকেনা খোঁজদিতে, রোজ রোজ মনে থাকে নাকি? তবে বেশিরভাগ সময় ইচ্ছা করেই মনে থাকছেনাকেন? নিবিড়ের বকা খেতে যে তার ভী- ষ- ণ ভালো লাগে আর তাছাড়া, তার জন্য কেউ চিন্তা করে, টেনশন করে, এই চিন্তাটা নিঝুমের মনকে অন্যরকম একটা খুশিতে ভরে দেয়ভালো ছাত্রী সেএই জীবনে দরকার ছাড়া, লেখাপড়ায় সাহায্য চাওয়া ছাড়া কেউ তার খোঁজ করেনিনিবিড়ের হঠাৎ এমন খাপছাড়া আচরণে অবাক হলেও তাই খুশিও হয় নিঝুমতাই এই ভালোলাগাটাকে বারবার এভাবে ওভাবে নেড়েচেড়ে দেখতে মন চায়সেজন্যই খোঁজদিতে ভুলে যেয়েরাগিয়ে দেয় মাঝে মাঝেই তার প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে
একদিন খোঁজ না পেলে নিঝুমের বান্ধবীদের মাথা খারাপ করে দেয় নিবিড়নিঝুম কোথায়?? যেখানে থাকুক, একটা খোঁজ এনে দে প্লিস”, এভাবেই অনুরোধ করে সে তাদেরতবে নিঝুম এসবের কিছুই জানেনাপ্রজ্ঞা, নিঝুমের অন্যতম ভালো বান্ধবীদের মধ্যে একজনতার সাথে ফোনে নিবিড়ের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল নিঝুম কারণ প্রজ্ঞার পছন্দের ছেলে ঋজুর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দিয়েছিল নিবিড়তারপর থেকেই প্রজ্ঞা আর ঋজুর প্রেম শুরু, আর প্রজ্ঞার সাথে নিবিড়ের পরিচয়এই প্রজ্ঞাই সর্বপ্রথম নিঝুমের কাছে তার সন্দেহটা ব্যক্ত করে নিঝুম তার বাসায় এলে, “নিবিড় মনেহয় তোকে পছন্দ করে রে নিঝুমকিন্তু নিঝুম আমলেই নেয়না সে কথাবলে, “খেয়ে আর কাজ নেই তোর? নিবিড়কে আমি চিনিনা, না?” প্রজ্ঞা বলে,“চিনবি না কেন? তবে এবার একটু আলাদাভাবে চেনার চেষ্টা করতুই জানিস, তোর একদিন খবর না থাকলে ছেলেটা কেমন অস্থির হয়ে থাকে?” এবার ঘাড় ঘুরিয়ে সরাসরি প্রজ্ঞার দিকে তাকায় নিঝুম, “তাই? তোকে কে বলল?” প্রজ্ঞা নীরবএরপর নিঝুম বলে, “তোর কোথাও ভুল হচ্ছেতুই তো জানিস এটা সম্ভব নাজানিস না আমরা…” নিঝুমকে কথা শেষ করতে দেয়না প্রজ্ঞা, “হ্যাঁ আমি জানি বাধাটা কোথায় কিন্তু প্রেম কি এসব দেখে নিঝুম?”প্রাণখোলা একটা হাসি দেয় এবার নিঝুম, “এবার বুঝেছিনিজে আরেকজনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস কিনা, তাই সবখানেই প্রেম দেখিস! শোন, তোরা যা জানিস তার চেয়েও বড় বাধা হল we never feel anything like this for each other. নিবিড় আমার প্রেমে পরলে আমি বুঝতামই তোদের কারো কিছু বলা লাগত নাকিন্তু তা হয়নিআমরা দুজন এত ঝগড়া করি টম এন্ড জেরির মতো, তোরাই তো বলিসএরপরও কী করে এখন আবার এই কথা বলিস? আমাদের মধ্যে সম্পর্ক হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাবে! হা হা হা! গাধী!”, বলে প্রজ্ঞার পনিটেইল করা চুলে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে চলে যায় নিঝুম
দেখতে দেখতে ডিসেম্বর মাস এসে যায়সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকলেও ডিসেম্বর মানেই কেমন একটা ছুটি ছুটি ভাব ঘুরে বেড়ায় আকাশে বাতাসেছুটির আমেজে ছোটবেলার বন্ধু নিঝুম নিবিড় লিসা আর সুপ্তি একত্রিত হয় নিঝুমদের বাসায়এরা সবাই ছোটবেলায় একই স্কুলে পড়লেও এখন প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা স্কুলে পড়ছেনিবিড় আর নিঝুমের মধ্যে যে গাঢ় বন্ধুত্ব, লিসা কিংবা সুপ্তির সাথে অতটা অ্যাটাচমেনট নেই ওদের, ওদের সাথে অত যোগাযোগও হয়ে ওঠেনা
নিবিড়ের দূরসম্পর্কের বড় বোন ঈশিতাও এসেছেসে নিবিড়দের বাসায় থেকে পড়াশুনা করেতাই নিবিড়ের বন্ধুদের সাথে পরিচয় তারও আছেআর সবার মা তো এসেছেনেইতবে মা এবং ছেলেমেয়েদের ফ্রেন্ড সার্কেল আলাদা আলাদা আড্ডা দিচ্ছে অবশ্যইহাসিঠাট্টায় সময় কাটাতে কাটাতে নিবিড় আজ আবারও নিঝুমকে আঘাত করে বসে আকাশকে নিয়েএবার নিঝুম আর কোন ঝগড়াঝাঁটিতে যায় না, সাফ বলে দেয় যে আকাশকে নিয়ে নিবিড় আর একটা কথাও বললে সে নিজের একটা ক্ষতি করে বসবে বেগতিক দেখে ঈশিতা নিঝুমকে টেনে নিয়ে যায় অন্য ঘরেকিন্তু নিয়ে যেয়ে যে কথা বলে তা শুনে আবারও নিঝুম দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েঈশিতা নিঝুমকে প্রশ্ন করে, “নিঝু তুই কি নিবিড়কে পছন্দ করিস?” নিঝুম বলে, “এই এক ব্যাপার আমি আর কতজনের কাছ থেকে শুনব?? একজন বলে নিবিড় আমাকে পছন্দ করে, আরেকজন আবার আমাকেই প্রশ্ন করছে আমি পছন্দ করি কিনাসমস্যাটা কোথায় তোমাদের সবার? জান না তোমরা এটা সম্ভব না? ” অন্য কেউ হলে এত কড়া ভাবে কথাগুলো বলতে পারতোনা নিঝুমকিন্তু নিবিড়ের বোন মানেই তারও বোন, এজন্যই বয়সের পরোয়া না করে এভাবে বলে দেয়ঈশিতা দমে নাবলে, “সম্ভব করতে চাইলেই সম্ভবতোদের মতো এরকম সমস্যা অনেকেরই আছেকিন্তু তারা সেটাকে জয় করেছেকিন্তু সম্ভব অসম্ভবের কথা পড়ে আসছেতুই আরেকবার ভাব, ভেবে বল তুই নিবিড়কে পছন্দ করিস কি নাতুই ওর জন্য নিজের ক্ষতি করতে চাইলি,এটা তো স্বাভাবিক নানিঝুম বলে, “আমি কোন ছেলের ব্যাপারেই এরকম কিছু ফিল করিনাআর কেন নিজেকে কষ্ট দেব সেটা আমি বলেছি তোমার সামনেইও আকাশ আর আমাকে নিয়ে এমন কথা বলে কেন? ও তো জানে যে আমি এমন নাএবার নিঝুমের চমকে যাওয়ার পালাঈশিতা বলে, “তুই পছন্দ করলেও আমি তোকে মানা করতাম সিরিয়াস হতেকারণ ও হয়তো তোকে সিরিয়াসলি নিত না তোকে মিসডকল দেয়, ওর স্কুলের একটা মেয়ে আছে, ওর ফ্রেন্ড, রূপা, ওকেও দিত এরকম মিসডকলওর কাছে অবশ্য সেটা শুধু বন্ধুত্বইকিন্তু রূপা সম্ভবত ওকে পছন্দ করেইচ্ছা করে করে ওকে ফোন দেয়, দরকার না থাকলেওও মিসডকল দিলে তখন নিবিড় ব্যাক করতআমাকে বলেছে ওর নাকি বিরক্ত লাগেকিন্তু আমি ঠিক সিওর নাআমার মনেহয় নিবিড় ওকে পছন্দ করেনিঝুমের চোখেমুখে একটা খুশি ঝিলিক দিয়ে যায়, “নিবিড়ের কাউকে পছন্দ???? ও হো!মুহূর্তে রাগ ভুলে নিবিড়ের কাছে ছুটে যায় নিঝুমকী রে রূপা কে?”, প্রশ্ন করেনিবিড় একটু হকচকিয়ে যায় প্রশ্নটা শুনেকিছু বলেনানিঝুম সুযোগ পেয়ে আবার পিছে লাগে, “হু হু তোমার বলতে হবেনা গুরু, আমি জেনে গেছি! পছন্দ কর তো বলতে কী ভয়?আমাকে নাম্বার দিস, আমিই বলে দেবনিবিড় বুঝানর চেষ্টা করে, “তোকে কে বলল আমি রুপাকে পছন্দ করি? করিনাও শুধুই আমার ক্লাসমেট, আমার আর সব বন্ধুর মতো একজন বন্ধুকিন্তু নিঝুম শোনে নাএরপর খোঁচাতেই থাকেসাথে যোগ দেয় লিসা আর সুপ্তিনিবিড় একবার কটমট করে ঈশিতার দিকে তাকায়নিঝুম তা দেখেও দেখেনা সে আছে তার খেয়ালে, নিবিড়- রূপা, রূপা- নিবিড়না দেখেই মেয়েটাকে পছন্দ করে ফেলে সে
লিসা আর সুপ্তি নিজেদের মধ্যে নিচুস্বরে কী যেন আলোচনা করছেনিঝুম যেয়ে হামলে পড়ে, “এই তোরা কী এত বলছিস রে কখন থেকে?” কিন্তু পাশ কাটিয়ে যায় ওরা এই প্রশ্ননিঝুম গায়ে মাখেনানিবিড় আর সেও তো কতকিছু গল্প করে, সব তো ওরা জানেনাএই ভেবে আর কিছু বলেনাহোসট হওয়ার কারণে নিঝুম আজ বন্ধুদের সাথে বেশি আড্ডা দিতে পারছেনা, আতিথেয়তা করতে একটু ছুটাছুটির মধ্যেআছেতাও যতটা সম্ভব সে বন্ধুদের সাথে থাকার চেষ্টা করছেদেখতে দেখতে বিকেল হয়ে যায়এবার একটু চিন্তায় পড়ে যায় নিঝুমএক স্যারের বাসায় ক্লাস আছেতার যাওয়ার ইচ্ছে নেই আজমা কে বললে হয়তো যেতে মানাই করবেনকিন্তু স্যার তো ছার দেবেন নাতাও একবার চেষ্টা করে দেখবে ভাবে নিঝুমঅন্তত রেডি তো হয়ে থাকা যাক, ভাবে সেআয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে থাকেনিবিড় একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ওর দিকেসে জানে যে আজ নিঝুমের ক্লাস আছেআর এটাও জানে যে সেই ক্লাসে আকাশ আছেহঠাৎ বলে ওঠে, “খালি চুল আঁচড়াচ্ছ কেন? ভালভাবে সাজগোজ কর একটুনিঝুম মাথায় চিরুনি ধরা অবস্থাতেই আয়নার দিক থেকে ঘুরে দাঁড়ায়, “কী বললি?” নিবিড়ের কণ্ঠের ঝাঁজ এবার স্পষ্টই বোঝা যায়,“ডেটে যাচ্ছ যখন, একটু সেজেগুজে যাওয়াই তো ভালো তাই না?” নিঝুম কী বলবে ভেবে পায়নানিবিড় খুব ভালোমতই তো বুঝছে যে তার যাওয়ার কোনই ইচ্ছে নেই ক্লাসেতাও এমন কথা বলল! না যাওয়ার চেষ্টা করবে ভেবেছিল, মুহূর্তে সেই চিন্তাটা বাতিল করে দেয় এবার নিঝুমএই ছেলের সাথে আর এক মুহূর্তও এক ছাদের নিচে নানিবিড়ের দিকে আর একবারও তাকায় না সেআর সবাইকে বাইবলে মাকে যেয়ে বলে ক্লাসে যাবে বের হয়ে যায় বাবার সাথেযাওয়ার সময় বাবার ফোন থেকে নিবিড়কে একটা মেসেজ দেয়, “আজ খুব বেশি কষ্ট দিলি তুই আমাকেএই মেসেজের কোন উত্তর দেয় না নিবিড়তার ভেতরটা তখন জ্বলছেতাকে উপেক্ষা করে নিঝুম আর কোথাও চলে যাবে, তাও আবার যেখানে ওই আকাশ আছে, এটা সে কোনমতেই মেনে নিতে পারেনানিঝুমের চুল আঁচড়ানো দেখেই তার মেজাজ খারাপ হওয়া শুরু হয়েছে, তাই বাঁকা বাঁকা কথা বলে ইচ্ছে করে নিঝুমকে কষ্ট দিয়েছেকিন্তু তাও নিঝুম চলে গেলবুকের ভেতর এটা কীসের আগুন জ্বলছে অহরহ তা বুঝেও না বুঝার চেষ্টা চালিয়ে যায় নিবিড় প্রজ্ঞার জেরার পর জেরায় তার কাছে সে কাল রাতে একটু আভাস দিয়েছে নিজের মনেরকিন্তু তা নিঝুমকে বলতে মানাও করে দিয়েছেকারণ নিশ্চিতভাবে সে কিছুই জানায়নিসে নিজেও নিশ্চিত না নিজের ব্যাপারেএমন তো হওয়ার কথা না! হবেও নাতবুও, নিজের অনুভূতিগুলোকে নিজের কাছেই বড় অচেনা ঠেকেপ্রজ্ঞা সাথে সাথে বান্ধবীকে জানাতে চেয়েছিল, কিন্তু নিবিড় বাঁধা দিয়েছে, “প্রজ্ঞা আমি এখনো সিওর নাআমাকে একটু সময় দেবলিস না কিছু আগেইতোকে ঋজুর দোহাইএরপর প্রজ্ঞার আর কিছু করার থাকেনাঋজুর নামটাই তার দেহমনে অদ্ভুত এক শিহরণ জাগায়সেখানে তার দোহাই দিলে প্রজ্ঞা অচল, নিরুপায়
ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথেই আকাশ বলে ওঠে, “এত দেরি করলি কেন আসতে? আমি কখন থেকে এসে বসে আছি!মনটা আগেই খারাপ ছিল আজ নিবিড়ের কথা শোনার পর থেকে আকাশের এই প্রশ্নে আর নিজেকে সামলাতে পারেনা নিঝুম, বারুদের মতো দপ করে জ্বলে ওঠে একদম চুপ আকাশআমি তোমার girlfriend না যে আমাকে সময় বেঁধে আসতে হবেআমি ক্লাসে পড়তে আসি, ক্লাসের সময়েই আসবতোমার সাথে আমার দেখা করার কথা না যে আগেই এসে বসে থাকতে হবেবলতে বলতে গলা ধরে যায় তারআকাশ হতভম্ব হয়ে থাকেএই মেয়ের রাগ সে আগেও দেখেছে, যতদিন ধরেই চেনে, রাগটাই সবচেয়ে বেশি দেখার সুযোগ হয়েছে তার অভিমানী নিঝুমের, আর আন্তরিকতা, যার কারণে মাত্র এক মাসের পরিচয়ে নিঝুম হয়ে উঠেছে তার অন্যতম প্রিয় বন্ধু কিন্তু তার কষ্টের রূপটা কখনো দেখেনি আকাশসদা উচ্ছল এই মেয়েটা যে কাঁদতে পারে, তা তার জানাই ছিলনাকী বলে ফেললাম যে এভাবে কেঁদে দিল নিঝুম?”, অবাক হয়ে ভাবতে থাকেজিগ্যেস যে করবে কী হয়েছে, তাও সাহস পায়নাএখন পর্যন্ত ক্লাসে শুধু সে আর নিঝুমএসেছেবাকিরা আসা শুরু করলে এভাবে কান্নাকাটি দেখলে কী মনে করবে তা ভেবে পায় না আকাশতবে নিঝুম নিজেই একটু পরে সামলে নেয়চোখ মুছে বলে, “স্যরি রেবেশি রিঅ্যাক্ট করে ফেলেছি কিন্তু তোকেও একটা কথা বলে দিচ্ছি আমি, তোকে আর আমাকে জড়িয়ে কোন কথা শুনতে আমি রাজি নাআমি তোর জন্য বন্ধুত্বের বাইরে কিচ্ছু ফিল করিনাএজন্য এমন কিছু কখনও করবিনা যাতে মানুষের মনে হয় যে আমাদের সম্পর্কটা শুধু বন্ধুত্ব না” “মানুষের না শুধু নিবিড়ের নিঝুম?”, আকাশের এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনা সেআকাশ বলে, “তোকে আর নিবিড়কে নিয়েও তো মানুষ কত কিছু ভাবে সেখানেতো তুই এমন রেগে যাস নাআর নিবিড় তোকে আর আমাকে নিয়ে সন্দেহ করলেই তোর এত লাগে কেন? ওর কাছে নিজেকে ঠিক প্রমাণিত করার এত চেষ্টা কেন তোর?” নিঝুম জ্বলন্ত চোখে আকাশের দিকে তাকায়, “তুই ভুলে যাচ্ছিস আকাশ যে নিবিড় আমার bestfriend.ও আমাকে ভুল বুঝলে আমার কষ্ট লাগবেইকিছু না বলে কাঁধ ঝাঁকিয়ে একটা বিশেষ ভঙ্গি করে আকাশ যার মানে অনেক কিছুই হতে পারেআরও ছাত্রছাত্রী এসে গেছে ইতিমধ্যেস্যারও এসে গেছেনএরপর আর বিশেষ কথাবার্তা হয়নাক্লাস শুরু হয়ে যায়পুরো সময়টা অকারণেই বারবার চোখ ভিজে উঠতে থাকে নিঝুমের
এরপর কেটে গেছে বেশ কয়েকদিনসেদিন ভীষণ মন খারাপ করে বাসায় ফিরেছিল নিঝুমএসে দেখে বন্ধুরা চলে গেছেরাতে মোবাইল চেক করেনা, কোন মেসেজ নেইপরদিন একটা জাতীয় দিবস ছিলসেই দিবসের শুভকামনা জানিয়েছিল রাতে নিবিড়কেব্যস, এইইএরপর আর কোন কথা হয়নি প্রায় একসপ্তাহএরপর একটা নতুন ঘটনা ঘটেনিঝুম যে স্যারের কাছে বাংলার জন্য কোচিং করছিল,অযাচিতভাবেই সেখানে ভর্তি হয় রূপাহ্যাঁ, সেই রূপা যার কথা ঈশিতা বলে গিয়েছিল নিঝুমকে প্রথমে রূপা নাম শুনে বিশ্বাস করতে পারেনি নিঝুম যে এই রূপা-ই সেই রূপা পরে পুরো নাম মিলিয়ে দেখেছে যে হুম, এ সেইখুশিতে লাফালাফি করা বাকি রাখে শুধু নিঝুমউত্তেজনা চেপে পরিচয় করে রূপার সাথেবলে যে সে নিবিড়ের বন্ধু নিঝুমের নাম শুনে একটা মিষ্টি কিন্তু রহস্যময় হাসি দেয় রূপা, “ও তুমিই নিঝুম?” “আমিই নিঝুম মানে?”, অবাক হয়ে প্রশ্ন করে নিঝুমনা কিছুনা, নিবিড়ের কাছে অনেক শুনেছি তোমার কথা”, রূপার উত্তরনিঝুম আরও অবাক হয় তার ব্যাপারে অনেক আবার কী বলবে নিবিড়? জিগ্যেস করে রূপাকেকিন্তু রূপা কিছু একটা চেপে যায় নিঝুমের কাছে এই তো তেমন কিছুনাবলেকৌতূহল হলেও আর চাপাচাপি করেনা নিঝুম, নতুন পরিচয় কেবল, এখনই কিছু নিয়ে চাপাচাপি করা ঠিক হবেনা ভেবে চুপ হয়ে যায়পিছনের সীটে বসে রূপাকে দেখতে থাকে তার অলক্ষ্যে দেখতে ভালোই রূপালম্বা কোঁকড়া চুল, হালকা ফোলা গাল, দেখলেই টিপতে ইচ্ছে করে, আর মুখটা, নিঝুমের মনে হয় অবিকল নিবিড়ের মায়ের মুখের গড়ন সেখানে নিবিড়ের মাকে ছোটবেলা থেকেই নিঝুমের খুব পছন্দছোট থাকতে নিঝুমের মা তো তাকে স্কুলে দিয়ে চলে যেতেননিবিড়ের মা রোজ বসে থাকতেন, স্কুল শেষ হওয়া পর্যন্তনিঝুমের মনে পড়ে, তাকে টিফিন খাইয়ে দিতেন রোজ আনটিসেই চার বছর বয়স থেকেই যেন নিঝুমের আরেক মা হয়ে গেছেন নিবিড়ের মাছোটবেলায় কতদিন মনে মনে চেয়েছে অবুঝ নিঝুম যাতে সৃষ্টিকর্তা নিবিড়ের মাকে তার মা করে দেন নিঝুমের কাছে অফুরন্ত মমতার প্রতিমূর্তি এক নারী নিবিড়ের মারূপাকে দেখতে দেখতে শৈশবের অজস্র এলোমেলো কথা মনে পড়ে যায় নিঝুমের, নস্টালজিক হয়ে যায়
বাড়ি ফিরেই আর তর সয় না,নিবিড়কে মেসেজ দেয়, “তোর বউকে দেখলাম আজএতদিন কোন মেসেজ দেয়নি নিবিড় নিঝুমকে, নিঝুমও দেয়নিসেদিনের ব্যাপারটা নিয়ে মেজাজ খিচড়ে ছিল দুজনেরইবেশ কয়েকবার দেবে ভেবেও পরে আর দেয়নি কেউই কিন্তু এবার আর নিবিড় রিপ্লাই না করে পারেনা, “আমার বউ মানে?” নিঝুম রিপ্লাই দেয়, “মানে রূপাআমার খুব পছন্দ হয়েছে রে, একদম আনটির আদল ওর চেহারায়, এই মেয়ে ভালো না হয়েই যায় নানিবিড় এই মেসেজ পেয়ে হাসবে না কাঁদবে বুঝে পায়নাফোনটা হাতে নিয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণশেষে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে রিপ্লাই করে, “আচ্ছা আমার বউকে তাহলে বলে দিস যে আমি কাল মামাবাড়ি যাচ্ছিনিঝুম আরও খুশি হয়ে যায়, বলে, “আচ্ছা বলে দেবোসাথে এটাও বলে দেবো যে তুই ওকে…” বাক্যটা শেষ না করেই দুষ্টুমিমার্কা একটা হাসি জুড়ে দেয় মেসেজের শেষে, তারপর পাঠিয়ে দেয়কিন্তু এই মেসেজের কোন রিপ্লাই আসেনানা আসুক, একসময় না একসময় তো নিবিড়ের রূপাকে বলতেই হবে, তাই এখন এড়িয়ে গেলেও কিছু যায় আসেনা, ভাবে নিঝুমপরদিন যেয়ে রূপাকে বলে যে নিবিড় মামাবাড়ি গেছেএকই সাথে পাশে বসে থাকা নিলীমার মোবাইল থেকে নিবিড়কেও মেসেজ পাঠায়, “বলে দিলাম তোর বউকে যা বলতে বলেছিলিএখন কি বাকিটাও বলব?” নিবিড় সাথে সাথে উত্তর দেয়, “না তোর কিছু বলার দরকার নেইএকদম পণ্ডিতি করবিনাআর কথা বাড়ায় না এরপর নিঝুমরূপার সাথে গল্প করতে থাকেদেখে রূপা তো বেশ ভালভাবেই জানে নিবিড়ের সম্পর্কে! এটাও জানে যে ওর মামাবাড়ি কোথায়! মামাবাড়ি গেছে বলতেই বলে দিল, “হুম্ম রাজশাহী গেছেমনে মনে বেশ আশান্বিত হয়ে যায় নিঝুম যে না,রূপা আর নিবিড় নিশ্চয়ই পছন্দ করে একে অপরকে মনটা গুনগুনিয়ে ওঠে নিজের অজান্তেই, ঠোঁটের কোণে একটা মুচকি হাসিও চলে আসে কখন যেন
পিয়া কী নাযারিয়া…”, নতুন শেখা খেয়ালটা গুনগুন করতে করতে আর চুল মুছতে মুছতে কী মনে করে থমকে যেয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে নিঝুমসদ্যস্নাত গোলগাল ফর্সা মুখ,পাতলা ঠোঁট, আর হালকা নীল কামিজ পরিহিত মাঝারি গড়নের দেহটা দেখতে দেখতে ছোট্ট একটা হাসি ছুঁড়ে দেয় নিজের উদ্দেশ্যেনাহ আমি এমনই ভালো! সাজগোজ আমার পোষাবে না!”,আপনমনেই বলেগতকাল সন্ধ্যায় একটা বিয়েবাড়িতে গেছিল নিমন্ত্রণ রক্ষা করতেসেখানে তার বয়সী মেয়েদের প্রসাধনের বহর দেখে তার আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেছেএত সাজতে পারে কোন মেয়ে?!বাব্বাহ! অবশ্য সাজতেই পারে, পরক্ষনেই আবার ভাবে সে, নিজে তো সাজগোজের ব্যাপারগুলো ভালো বোঝে না নিঝুমএত বড় হয়েছে, এখনো কাজল দিতে পারেনা, মার দিয়ে দিতে হয়আজ তো বড়দিন, আজ একটু সেজে ক্লাসে যাবো নাকি?”, ভাবতে যেয়ে আবার হেসে ফেলে সেইশ! তোমাকে কে দেখবে তুমি ছাড়া সোনা যে আজ সাজার শখ হল তোমার?”, প্রতিবিম্বের দিকে ভেংচি কেটে ভেজা চুলগুলো আবার মুছতে থাকেকেমন যেন একটা বিষণ্ণতা এসে ভর করে মনেতারও তো কেউ থাকতে পারত, যার জন্য সে নিজেকে সাজিয়ে তুলত মনের মাধুরী মিশিয়ে, চোখের কোলে কাজল টেনে, কপালে প্রজাপতির ডানার আবির মাখা টিপ পরে, আর হাতে বৃষ্টির রিমঝিম সুর তোলা চুড়ি গলিয়ে,আর…“এই নিঝু! ক্লাস আছে যাবিনা??” মায়ের ডাকে সম্বিত ফেরে নিঝুমেরহ্যাঁ মা যাবো, আসছি দাঁড়াও”, বলে মাথে নেড়ে যেন বিষণ্ণতাটাকে ঝেড়ে ফেলে সেআনমনে নিজের দিকে তাকিয়ে আরেকবার হেসে ক্লাসের জন্য ব্যাগ গুছাতে চলে যায়
ক্লাসে যাবার সময় পুরোটা পথ কেমন আনমনা হয়ে থাকে নিঝুমনিজের কাছে তো সে পরিষ্কারতবে কেন আজ বুকের মাঝে একটা অব্যক্ত বেদনা বারবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে? কেন মনে হচ্ছে তাকেও যদি কেউ ভালবাসত? বান্ধবীদের রিলেশন আর কিছুদিনের মধ্যেই ব্রেকআপের সমাহার দেখতে দেখতে তো প্রেমের উপর তার যতটুকু ভরসা ছিল তাও নেই বললেই চলেতাহলে আজ কেন কারো অভাব বোধ হচ্ছে তীব্রভাবে? আর সবচেয়ে আশ্চর্য, এই অভাববোধের সাথে সাথেই এমন একটা মুখ মনের পর্দায় ভেসে উঠছে যাকে দেখে নিঝুম বারবার চমকে উঠছেএই মুখ, এই হাসি, এই চোখ, এসব তো তার জন্মজন্মান্তরের পরিচিতএ কেমন দ্বিধা? এ কী করে সম্ভব? নিঝুম তো কোনদিন তার ব্যাপারে আর কিছু ভাবেনিতবে আজ কেন সেই অনুপস্থিত, অস্তিত্বহীন কারোসাথে এই মুখটা একাকার হয়ে যাচ্ছে? আর ভাবতে পারেনা নিঝুমকে যেন কথা বলে ওঠে বুকের মধ্যে বসে,“ভালবাসার দরকার নেই তোমার নিঝুমতুমি কারো জন্য কিছু ফিল করনাআর ওর জন্য তো না-ইতুমি কি ভুলে গেছ যে মানবজাতিকেই তুমি সবচেয়ে বেশি ভয় কর? ভুলে গেছ যে তোমার বন্ধুবান্ধবদের জন্যেও তুমি শুধু একটা ব্যবহারের জিনিস? যখন যার দরকার হবে, তখন সে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করবেতোমার সরলতার সুযোগ নিয়ে তোমাকে ঠকাবে,তোমার পিছে তোমার সরলতা নিয়ে অন্যদের সাথে হাসাহাসি করবেভুলে গেছ নিঝুম এসব? ভালবাসা তোমার জন্য নয়তুমি একা নিঝুম, বড় একাতুমি শুধু ভালবেসে যাও, তোমার জন্য কারো ভালবাসা নেইনিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে নিঝুমেরসত্যিই তো, সে বড় একাসবার সাথে সে উচ্ছল, রঙিন প্রজাপতির মতো নিঝুমআর তার নিজের জগতে সে তার নামের মতোই নিঝুম কেউ নেই তার
বন্ধুদের জন্য সে জান দিয়ে দিতে পারে, কিন্তু এই বন্ধুরাই তাকে বারবার ঠকিয়েছে, বারবার কষ্ট দিয়েছেসে তাদের মতো মডার্ন না, তা নিয়ে হাসাহাসি করেছে, দরকার শেষ হলে তাকে এড়িয়ে গেছেহাতেগোনা কয়জন মাত্র ভালো বন্ধু আছে তারতার মধ্যে নিবিড় সবার থেকে আপননিবিড়!নামটা মনে হতেই আবার আড়ষ্ট হয়ে যায় নিঝুমবারবার মাথা নেড়ে যেন নামটাকে ঝেড়ে ফেলতে চায় এই মুহূর্তের জন্যগাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় এই বিষণ্ণতাটা কেটে যায়তার জায়গায় ঠাঁই নেয় অন্য একটা আনন্দআজ! আজ সে রূপাকে বলবে নিবিড়ের পছন্দের কথাএই কয়দিন নিবিড়কে সে বহুত জ্বালান জ্বালিয়েছে রূপার কথা বলে বলেহুমকি দিয়েছে রূপাকে বলে দেবে বলেকিন্তু কেন যেন নিবিড় বারবার ওকে বাধা দিয়েছেনিঝুম এই বাধাটাকে নিবিড়ের প্রেয়সীকে পছন্দের কথা না বলতে পারার জড়তা বলেই ধরে নিয়েছেতারপর নিজে নিজেই ঠিক করেছে রূপাকে বলে দেবে যে নিবিড় তাকে পছন্দ করেনিজের একাকীত্বের কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে নিঝুম যে আজ-ই বলবেনিঝুমের জীবন খালি থাকুক না, তাতে কিছু যায় আসেনাকিন্তু নিবিড়ের জীবন তো সে তার মতো খালি থাকতে দিতে পারেনা, যেখানে নিবিড়ের কাউকে পছন্দও আছেবোকাটা বলতে না পারলে দেখা যাবে রূপা অন্য কারো হয়ে গেল,তখন? তখন নিবিড়ের কষ্ট তো সে সইতে পারবেনাতারচেয়ে বলে দেওয়াই ভালো, দুজনই দুজনকে পছন্দ করে যখন, ভাবতে ভাবতে স্যারের বাসার গেটের সামনে গাড়ি এসে যায়বাবাকে টা টাজানিয়ে নেমে পড়ে গাড়ি থেকে
ক্লাসে যেয়ে দেখে রূপা তখনও আসেনিতবে নিলীমা এসেছেনিঝুম আর নিলীমা, নাম দুটির মধ্যে অনেক মিল আছে বলেই হয়তো অনেক ছোট ছোট ঝগড়া, সারাজীবন মুখ না দেখার পণ করার পরেও তাদের বন্ধুত্বটা রয়ে গেছে, আরও গভীর হয়েছেযতটুকুই মন খারাপ ছিল নিঝুমের, নিলীমাকে দেখে এক মুহূর্তের মধ্যে সব যেন কর্পূরের মতো উবে যায়স্যার এখনও আসেননি, অন্য রুমে আছেনক্লাসে শুধু নিঝুম, নিলীমা, আর আরও কয়েকজন ছাত্রীকী যে হয় নিঝুমের, ছুটে যেয়ে নিলীমার পাশে বসে পড়ে অন্যরকম উচ্ছ্বাসে তাকে জড়িয়ে ধরে, “নিলী আই লাভ ইউ! উম্মাহ!!”, টুক করে একটা চুমুও খেয়ে ফেলে গালেনিলীমা ভীষণ অবাক হয়ে যায় নিঝুমের এমন খুশি দেখেনিঝুম না বললেও সে ঠিকই বুঝতে পারে যে তার নিঝুর কোন কারণে মন খারাপ ছিল, এখন সেটা চাপা দিতে চাইছে তাকে আঁকড়ে ধরেকিচ্ছু বলেনা নিলীমা, কী হয়েছে কিছুই জিগ্যেস করেনা, শুধু ধীরে ধীরে নিঝুমের রেশম কোমল ভেজা চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দেয়নিঝুমও যেন নিলীমার হাতের সবটুকু মমতা শুষে নিতে চায় নিলীমার কাঁধে চুপচাপ মাথা রেখে চোখবন্ধ করেসেই মুহূর্তে দুজনের মনেই একটা কথাই খেলে যায় বারবার, কথায় বলে মেয়েরাই নাকি মেয়েদের শত্রু, কিন্তু মেয়েরাই হয়তো পারে আরেকটা মেয়েকে এমন আপন করে নিতে, এমন গভীর মমতায়, ভালবাসায় আঁকড়ে ধরতেএকটু পর মুখ তুলে নিঝুম বলে, “জানিস নীলু আজ না আমি রূপাকে নিবিড়ের কথা বলে দেবো!”,নিলীমা বান্ধবীর মুখের দিকে তাকায় ভালো করে,দেখতে চায় এই আকাঙ্ক্ষার অন্তরালে কোন বেদনা আছে কিনাকিন্তু পারেনা দেখতেবরং নিঝুমের মুখটা কেমন একটা আনন্দে জ্বলজ্বল করছেনিলীমা অবাক হয়ে ভাবে, “বন্ধুত্ব এতটা নিঃস্বার্থ হতে পারে? সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে অন্য কারো হাতে তুলে দিতে কি এই বোকা মেয়েটার একটুও বাধবেনা?”কিন্তু এই ভাবনাগুলো যে নিঝুমকে বলে কোনই লাভ নেই,তা নিলীমার থেকে ভালো বোধহয় আর কেউ জানেনা নিঝুমের বান্ধবীদের মধ্যেএকটা অজানা আশঙ্কায় বুক কেঁপে ওঠে নিলীমার, “মেয়েটা এজন্য পরে কষ্ট পাবেনা তো? যখন জানবে রূপা নয়, সে-ই ছিল নিবিড়ের যোগ্য জীবনসঙ্গিনী?” আবার নিঝুমের মুখের দিকে তাকায় নিলীমা,দুর্গাপ্রতিমার কল্যাণদায়িনী মুখের কথা মনে পড়ে যায় তার, বড় শুদ্ধ মনে হয় এইমুহূর্তে তার প্রাণের বান্ধবীটিকেসমস্ত দুশ্চিন্তা পাশে ঠেলে হাসে অবশেষে নিলীমা, “দেখ তুই যা ভালো বুঝিস করতোকে তো বাধা দিয়ে লাভ নেইতবে আমি বলব একবার নিবিড়ের সাথে সরাসরি কথা বলে নে”, বলে নিজের মোবাইলটা বাড়িয়ে দেয় নিঝুমের দিকেনিঝুম ভাবে, স্যার যখন এখনও আসেননি পড়াতে, দেরি হবে নিশ্চয়ই আজ, আরও স্টুডেন্ট আসা বাকি আছে, কথাটা বলেই ফেলা যাক নিবিড়ের সাথেআজ একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে, কারণ আজই শেষ ক্লাস তার রূপার সাথেনিলীমাকে আবারও জড়িয়ে ধরে বলে, “এজন্যই তো তোকে এত ভালবাসি রে আমার নীলপরী! তুই সব বুঝিস!তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে নিচে নেমে যায় কথা বলতে
নিবিড় এখনও মামাবাড়ি আছেআজ সকালে মামাত ভাইয়ের সাথে বেড়াতে বের হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেখবেবিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি আছে, এমন সময় ফোন বেজে ওঠেপকেট থেকে বের করে দেখে নিলীমার নাম্বারভ্রু কুঁচকিয়ে ফেলে নিলীমার তো তাকে ফোন করার কথা নাকোনদিন কথা বলেনি নিলীমার সাথে ফোনে নিঝুম পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, তারপর টুকটাক কথা হয়েছে মেসেজেতাহলে ফোন কেন দিল? আজ সকাল থেকে আবার নিঝুমেরও কোন খবর নেই, মিসডকল দেয়নিএইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ফোনটা কেটে যায়কলব্যাক করে নিবিড়প্রথম রিং হতেই ওপাশ থেকে একটা উচ্ছল গলা ধমকে ওঠে, “এতক্ষণ লাগে ফোন ধরতে!?” এক ঝলক দমকা হাওয়া বয়ে গেল যেন নিবিড়ের চারপাশেএই কণ্ঠ, এই ধমকের সুর,এ যে তার ভীষণ ভাললাগার!নিঝুম! তুই?”, কয়েক সেকেন্ড পরে কোনরকমে বলতে পারেনিঝুম বলে, “হ্যাঁরে আমি! এত অবাক হবার কী আছে শুনি?” “না মানে আমার সাথে তো ফোনে কথা বলিসনা,সবসময়েই মেসেজেই কথা হয়েছেআজই প্রথম ফোন করলি, তাও আবার নিলীমার নাম্বার থেকে তাই একটু অবাক হলাম”, বলে নিবিড়এতক্ষণে কিছুটা সামলে নিয়েছে নিজেকেনিঝুমেরও মনে পরে যে হ্যাঁ, আজই তো সে নিবিড়কে প্রথম ফোন করছে পারসনালি যোগাযোগ শুরু হবার পর থেকেবলে, “হু জানিসই তো আমার ফোন নেইআর বিনা দরকারে ফোন করে বিরক্তই বা করব কেন তোকে বল?” নিবিড়ের দিক থেকে এই প্রশ্নের কোন উত্তর আসেনাকী বলবে সে এই মেয়েকে? দরকারের বাইরেও যে কী দরকার থাকতে পারে তা একে কে বোঝাবে? নিঝুম কিছুক্ষণ উত্তরের আশায় থেকে বলে, “কেমন আছিস?মামাবাড়ি কেমন ঘুরছিস?” নিবিড় বলে, “ভালোতুই কেমন আছিস?” ঝর্ণার বহমান পানির মতো কলকল করে ওঠে এবার নিঝুমের কণ্ঠ, “আমি তো আজ থেকে অনেক ভালো থাকব! আজ যে আমার বন্ধুকে তার প্রিয়তমার সাথে মিলিয়ে দেবো!”, বলে হাসতে থাকে নিঃশব্দেনিবিড় হাসির শব্দ না শুনতে পেলেও কণ্ঠ শুনেই বুঝতে পারে যে নিঝুমের ঠোঁটে এখন একটুকরো হাসিঝলমল করছেকিন্তু কথাটা শুনে যে তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছেকীসের কথা বলছে নিঝুম তা সে খুব ভালমতই বুঝতে পারছেআর এটাও বুঝতে পারছে যে আজ আর আর ছাড়াছাড়ি নেই, বলেই ছাড়বে নিঝুমতবুও শেষ চেষ্টা করে দেখে, না বুঝার ভান করে, “কী বলছিস? কার কি প্রিয়তমা না ছাতা??” নিঝুম রাগেনানিবিড়ের চালাকি তার কাছে ধরা পড়ে গেছেইচ্ছে করেই না বুঝার ভান করছে নিবিড়এবার একটু শব্দ করেই হেসে ওঠে সে, “আহা বাছাধন বোঝনা কিছু তাই না?আচ্ছা ভালমত বুঝিয়ে দিচ্ছি, শোন, আজ আমি রূপাকে বলে দেবো যে তুই ওকে পছন্দ করিসএবার বুঝেছিস তো? দ্বিতীয়বার যাতে আবার না বুঝান লাগে” “নিঝু পাগলামি করিস না!আমি ওকে পছন্দ করিনা”, বেশ একটু রাগত কণ্ঠে বলে ওঠে নিবিড়নিঝুম শুনতে চায়না,বলে, “পছন্দ করিস না তো ওকে মিসডকল দিতি কেন রোজ?” উত্তর দেয়না নিবিড়নিঝুম বলে, “কী? উত্তর দিতে পারলিনা তো? কীভাবে দিবি? ওকে পছন্দ করিস যে! আর ও ও তোকে পছন্দ করে রে আমি গেলাম বলতেএবার সাংঘাতিক রেগে যায় নিবিড়, “দুত্তোর! কিচ্ছু বুঝতে চায়না কিছুনা! ঠিক আছে যা বল গে যেয়ে!”, বলে ফোন রেখে দেয়নিঝুম এহেন রাগে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরেআবার ফোন করতে যায় নিবিড়কে, কিন্তু সেই সময়ে রূপাকে আসতে দেখে আর ফোন করেনা, ক্লাসে চলে যায়যেয়ে দেখে ক্লাস শুরু হয়ে গেছেনিলীমার পাশে যেয়ে ফোনটা ওর হাতে গুঁজে দিতে দিতে ফিসফিস করে বলে, “বলতে বলেছে, কিন্তু খুব রেগে গেছে কেন জানিবান্ধবীর বেচারা মুখটার দিকে তাকিয়ে হাসি চাপতে পারেনা নিলীমা, বলে, “বেশ হয়েছে! তোমার উপর রাগাই উচিত!নিলীমা জিগ্যেস করতে যাবে কেন?”, এই সময় রূপা এসে ওদের সামনের সীটে বসেএখন আর রূপা আর নিবিড়কে নিয়ে কথা বলা যাবেনা বুঝে নিঝুম চুপ হয়ে যায়, শুধু মুচকি হেসে একটা ইশারা করে নিলীমাকে যে এসে গেছে, আর দেরি নেইনিলীমা আবার নিঝুমের আনন্দ দেখে আনমনা হয়ে পড়তে থাকে
ক্লাস চলছেএখন কথা বলার উপায় নেইসুতরাং ধৈর্য ধরতেই হয় নিঝুমকে দীর্ঘ দেড়টি ঘণ্টা পর সে সুযোগ পায় রূপার সাথে কথা বলারক্লাস শেষ তখন রূপা চলে যাচ্ছিলনিঝুম ডেকে বসায়, “রূপা একটু বসবে? কথা আছেপাশ থেকে নীলিমারও হাত চেপে ধরে রাখেরূপা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে পড়ে আবার ক্লাসটা খালি হবার সময় দেয় নিঝুমযখন ক্লাসে তারা তিনজন ছাড়া আর কেউ নেই, তখন মুখ খোলেকিন্তু সাথে সাথেই আবার বন্ধ করে ফেলে, এত সিরিয়াস কথা তো সে জীবনে কারো সাথে বলেনিসারাজীবন বন্ধুদের সাথে ফাজলামি, দুষ্টুমি করে সময় কেটেছে তারবন্ধুমহলের অন্যতম প্রাণ হিসেবে পরিচিত এই নিঝুমএখন এত গুরুত্বপূর্ণ, গম্ভীর কথা সে কীভাবে বলবে? তাও আবার নিজের না, বন্ধুর প্রেমের প্রস্তাব দিতে হবে! ইশশি বড্ড ভুল হয়েগেছে, প্র্যাকটিস করা উচিত ছিল একটু”, ভাবতে ভাবতে মাথা চুলকাতে থাকে নিজের অজান্তেইকী হয়েছে নিঝুম? কী বলবে?”, রূপার প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় নিঝুমঅবশেষে যা থাকে কপালে ভেবে হড়বড় করে বলে ফেলে, “রূপা নিবিড় তোমাকে ভীষণ পছন্দ করেআমি জানি তুমিও ওকে পছন্দ করকিন্তু কেউই কাউকে বলতে পারছনাতাই আমিই নিবিড়ের পক্ষ থেকে তোমাকে প্রপোস করছিবলে যেমন আচমকা শুরু করেছিল তেমন আচমকাই চুপ হয়ে যায় নিঝুমসারা ক্লাসরুমে কেমন একটা নিস্তব্ধতা নেমে আসেসবকিছু বড় চুপচাপরূপা চেয়ে আছে নিঝুমের দিকেতাকিয়ে থাকতে পারেনা নিঝুম রূপার চোখেনিলীমার হাত থেকে ফোন নিয়ে দ্রুত নিবিড়কে মেসেজ করে দেয়, “বললামতারপর আবার তাকায় রূপার দিকেকী উত্তর দেবে রূপা?
পরদিননিবিড় পাগলের মতো নিলীমাকে ফোন করে যাচ্ছে, “কোথায় গেল ও? যেভাবে হোক ওকে খুঁজে দে নিলীমাআমি তো ওকে মানা করেছিলাম, ও শুনল নাসকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েকটা মানুষ তন্ন তন্ন করে খোঁজে নিঝুমকেবাসায় ফোন দিলে ব্যস্ত আছে বলে ফোন ধরছে না, মোবাইলও নেই যে ফোন করে পাওয়া যাবে নিবিড়ের অবস্থা পাগলপ্রায়কী করবে কিছুই বুঝে পাচ্ছেনাশহরে থাকলে তাও মাকে বলে কোনভাবে নিঝুমের বাসায় চলে যাওয়া যেত, কিন্তু সে তো আছে মামাবাড়ি! কেন যে এত বোকা আর জেদী মেয়েটা!!! নিজের উপরই রেগে যায় নিবিড়গতকালের ঘটনা ভেসে আসে চোখের সামনেকাল নিঝুম মেসেজ দেওয়ার পর সে সাথে সাথে রিপ্লাই করেছিল রূপা কী বলেছে জানতে চেয়েবেশ কিছুক্ষণ পর নিঝুম শুধু একটা শব্দ লিখেছে রিপ্লাইয়ে, “স্যরিতারপর থেকে আর কোন খোঁজ পায়নি নিবিড় নিঝুমের নিবিড় জিগ্যেস করেছে কিসের জন্য স্যরি, কোন রিপ্লাই নেইএকঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর আর না পেরে ফোন দিয়েছে নিলীমার নাম্বারেনিলীমা ফোন ধরে জানিয়েছে নিঝুম চলে গেছেআর জানিয়েছে কী হয়েছেনিঝুমের কথার পর রূপা একটা বিস্ময়ের অভিব্যক্তি নিয়ে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে থেকেছেতারপর বলেছে, “কী বলছ তুমি নিঝুম? এটা সম্ভব নাআমার পরিবারের লোকেরা জানলে আমাকে মেরে ফেলবেনিবিড় আর আমার মধ্যে এমন কিছুই নেইনিবিড় আমাকে পছন্দ করেনাআমরা শুধুই বন্ধুএরপর চলে গেছেনিঝুম বসে থেকেছে বজ্রাহতের মতোটেরও পায়নি তার পাশে বসে থাকা নিলীমা কখন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে রূপার উত্তর শুনেকিন্তু নিঝুম? তার চোখ যে ভিজে উঠেছে জলেবৃষ্টির ফোঁটার মতো টপটপ করে ঝরতে থাকে নীরবেনিলীমা কী বলে সান্ত্বনা দেবে বুঝে উঠতে পারেনা বান্ধবীর অবস্থা দেখে আবারও ভাবতে শুরু করে, এই মেয়ে এত বোকা কেন? মুখে বলে, “কাঁদিস না নিঝুমআমি তো তোকে আগেই মানা করেছিলামনিঝুম কাঁদতে কাদতেই বলে, “কিন্তু রূপার চোখে যে আমি নিবিড়ের জন্য ভালবাসা দেখেছি রে, সেটা তো মিথ্যা নয়ও কেন মানা করল? এখন নিবিড়ের কী হবে?” নিলীমা বলে, “রূপা কেন মানা করে দিল তা তো আমি জানিনাকিন্তু নিবিড় শুনলে হয়তো খুশিই হবেঅঝোর কান্নার মধ্যেও ঝাঁঝিয়ে ওঠে নিঝুম, “খুশি হবে কেন?যাকে পছন্দ করে সে মানা করে দিলে কি কেউ খুশি হয়??” নিলীমা উত্তর দেয় নানিঝুম আস্তে আস্তে বলে এরপর, “কিন্তু নিলী, আমি যে ওদের বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিলামএরপর তো রূপা আর নিবিড় কখনোই স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবেনা হয়তোভালবাসা তো গেলই,আমার জন্য নিবিড় তার বন্ধুও হারিয়ে ফেললঅদ্ভুত এক অপরাধবোধে ছেয়ে যায় নিঝুমের মনকিছুতেই কান্না থামাতে পারেনা সেনিলীমা ওকে বলে, “নিবিড় মেসেজ দিয়েছে,রিপ্লাই করনিঝুম বলে, “কী রিপ্লাই করব? আমি যে ওর কাছে অপরাধীআমি চাইনা ওর জীবনে আর আমি থাকিএকটার পর একটা ক্ষতিই করে যাবো হয়তো এরপরআমি আর ওর সাথে বন্ধুত্ব রাখব নাবলে নিবিড়কে স্যরিলিখে পাঠিয়ে বের হয়ে যায় ক্লাস থেকে, নিলীমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েইসবকিছু শোনার পর নিবিড় রূপাকে নিয়ে একটা কথাও বলেনি, শুধু পাগলের মতো নিলীমাকে বারবার অনুরোধ করেছে নিঝুমের একটা খোঁজ করে দিতেআজ দ্বিতীয় দিন, নিঝুমের এখনও কোন খোঁজ নেইকাল থেকে নিলীমা, প্রজ্ঞা কাউকে বাদ রাখেনি নিবিড় নিঝুমকে একটা বার খুঁজে দেওয়ার কথা বলতেকিন্তু নিঝুম কারো কোন যোগাযোগেরই সাড়া দিচ্ছেনামামাবাড়ির পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে নিস্ফল আক্রোশে বাতাসে থাবা মারে নিবিড়ইচ্ছে হয় এখনই নিঝুমের কাছে ছুটে যায়, এই পাগলামি আর টেনশনের জন্য অবুঝ মেয়েটাকে দু-চার ঘা লাগিয়ে বুকে টেনে নেয়, বলে, “নিঝুম…” কিন্তু কী বলবে কোনমতেই ভেবে পায়না নিবিড়নিজের কাছেই নিজেকে বড় অসহায় মনে হতে থাকে।................চলেব

0 comments: